বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ১১:১৮ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
রাজবাড়ী জেলায় নৌকার প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন পরিচালনায় যুবলীগের কমিটি গোয়ালন্দে মহাসড়কের পাশে বন বিভাগের ৫৪১টি গাছ কেটে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা রাজবাড়ীতে নিরাপদ অভিবাসন ও দক্ষতা উন্নয়ন শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত রাজবাড়ী থিয়েটারের আয়োজনে চার দিনব্যাপী নাট্যোৎসব শুরু রাজবাড়ী কালেক্টরেটের পক্ষ থেকে এডিসি মাহাবুর রহমানকে বিদায় সংবর্ধনা প্রদান রাজবাড়ী জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে এডিসিকে বিদায় সংবর্ধনা পাংশায় অস্ত্র মামলায় গ্রেফতারকৃত কৃষক লীগ নেতা হেনা মুন্সী শ্রীঘরে পাংশায় নিপা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে জনসচেতনতায় র‌্যালী ও আলোচনা সভা পাংশায় ইটভাটার মালিককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা কুয়াশায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে সোয়া তিন ঘন্টা ফেরী চলাচল বন্ধ

বালিয়াকান্দিতে গড়াই নদীতে ভাঙ্গন॥ঘর-বাড়ী ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাচ্ছে এলাকার মানুষ

  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৭ জুলাই, ২০২১, ২.০৭ এএম
  • ৩৮৬ বার পঠিত

॥আতিয়ার রহমান আতিক॥ চলতি বর্ষা মৌসুম শুরু হতে না হতেই রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার গড়াই নদীর বাঁকে বাঁকে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙ্গন কবলিত এলাকার মানুষ আতঙ্কে ঘরবাড়ী ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছে।

গত কয়েক দিনের ঘন বৃষ্টিতে নদীর পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়েছে তীব্র স্রোত। উজান থেকে আসা এ তীব্র খরস্রোত বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া মরাবিলা, জামসাপুর, কোনাগ্রাম, সোনাকান্দর, নারুয়া ও জঙ্গল ইউনিয়নের আগপোটরা, পাচপোটরা, পুষআমলা ও সমাধিনগর গ্রামের নদীর পাড়ে আঘাত হানছে। বিশেষ করে গড়াই নদীর বাঁকে বাঁকে এ ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করছে।

গত ৩বছর যাবৎ পানি উন্নয়ন বোর্ড, নদী গবেষণা ইনস্টিটিউট, স্থানীয় সরকার ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ জিও ব্যাগে বালু ফেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। এ বছর বর্ষা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে নারুয়া ইউনিয়নের জামসাপুরে জিও ব্যাগে বালু ভরে ও জঙ্গল ইউনিয়নের পুষআমলা বেড়ীবাঁধ সংস্কার, পোটরা জিও ব্যাগে বালু ভরে নদীর ভাঙ্গন প্রতিরোধে কাজ করা হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ফরিদপুর নদী গবেষণা ইনস্টিটিউট নারুয়া ইউনিয়নের জামসাপুর এলাকার নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে দেড় কিঃ মিঃ বাঁশের বেড়া দিয়ে নদী শাসনের কাজ করে। পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে গড়াই নদীর ভাঙ্গন প্রতিরোধ ও নাব্যতা বৃদ্ধির জন্য ২৫ ফুট লম্বা বাঁশের বেড়া, ১৩ ফুট মাটির নিচে ও ১২ ফুট মাটির উপরে রাখা হয়। এ কাজের ফলে নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ হয় ও বাঁশের বাঁধের অপর পাড়ে পলি ও বালিমাটি পড়ে ফসলী জমি বাড়ে। পরবর্তীতে নারুয়া খেয়া ঘাট (নারুয়া গ্রামে) এলাকায়ও অনুরূপ প্রকল্পের কাজ করা হয়।

জঙ্গল ইউনিয়নের পুষআমলা গ্রামের মৃত সন্তোস বিশ্বাসের ছেলে রমেন্দ্র নাথ বিশ্বাস ও অনিমা রাণী বিশ্বাস জানান, সমাধিনগর অর্যসংঘ বিদ্যামন্দিরের দানবীর কালিপদ বিশ্বাসের ভিটা থেকে তার বংশধর সহ ১০টি পরিবার ইতোমধ্যেই বাড়ী-ঘর ছেড়ে অন্যত্র নিরাপদ অবস্থানে চলে গেছেন। তাদের প্রায় ২ একর জায়গাসহ ঘর বাড়ী নদী গর্ভে চলে গেছে। এবারের ভাঙ্গন আমাদের পূর্বপুরুষের ভিটা নিয়ে যাবে, এ আশঙ্কা করছি। আমরাও শীঘ্রয় নিরাপদ জায়গায় চলে যাবো।

ঠিকাদার মোঃ নায়েব আলী শেখ জানান, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এ বছর নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে ৫৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বালু ও সিমেন্টের মিশ্রনে জিও ও ঘানি ব্যাগে ২১০ মিটারের কাজ করছি।

জঙ্গল ইউপি’র ৬ নং ওয়ার্ডের সদস্য মিলন কুমার মন্ডল জানান, নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে বেড়ী বাঁধ নির্মাণ ও জিও ব্যাগের যে কাজ চলছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় যৎসামান্য। ভাঙ্গন প্রতিরোধে আর কাজ করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি, নতুবা ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো যাবে না।

জঙ্গল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নৃপেন্দ্র নাথ বিশ্বাসকে গড়াই নদীর পানি প্রবাহের পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষা ও ভাঙ্গন প্রতিরোধের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, গড়াই নদীর পানি প্রবাহের পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষা হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। আমার ইউনিয়নে গড়াই নদী ভাঙ্গনে মানুষ অসহায়ের মত সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি মাননীয় সংসদ সদস্য মোঃ জিল্লুল হাকিমের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। এখন পর্যন্ত আমার ইউনিয়নের সামান্য বেঁড়ী বাঁধ সংস্কার ও জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। যা নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য। জরুরী ভিত্তিতে নদী শাসনে টেকসই ব্যবস্থা নেয়া না গেলে বড় ধাক্কা আসতে পারে। এতে শত শত পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

নারুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম জানান, নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে নদী পাড়ে জিও ব্যাগ ও বাঁশের বেড়ার কাজ চলছে। নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে টেকসই ব্যবস্থা সহ বড় প্রকল্প নেয়া প্রয়োজন বলে তিনি জানান।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও মাহমুদুল হাসান জানান, বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়ার জামসাপুরে ৫৯ লক্ষ টাকা, পোটরায় ১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ১৭৫ কেজি বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার কাজ চলছে। পুষআমলা বেঁড়ী বাঁধ ১৩ লক্ষ  টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে।

বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আম্বিয়া সুলতানা জানান, নারুয়া ও জঙ্গল ইউনিয়নের পুষআমলা পোটরা গড়াই নদীর ভাঙ্গন এলাকা বিভিন্ন সময় পরিদর্শন করাসহ রাজবাড়ী জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। তিনি নদী ভাঙ্গন এলাকাতে বাঁশের বেড়া ও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের জরুরী কাজের অংশ হিসেবে ভাঙ্গন রোধে  জিও ব্যাগে বালু ও সিমেন্ট মিশ্রণে কাজের  ব্যবস্থা নিয়েছেন।

উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, নারুয়া ও জঙ্গল ইউনিয়নে গড়াই নদী পাড় যেভাবে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে তা বাঁশের বেঁড়া ও বালু ভর্তি জিও ব্যাগের ছোট খাটো প্রকল্পের কাজে এই ভাঙ্গন প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। জরুরী ভিত্তিতে বড় প্রকল্পের মাধ্যমে ভাঙ্গন রোধে যদি কর্তৃপক্ষ কাজ না করেন তা হলে নারুয়া বাজার ও সমাধিনগর বাজারসহ নদী পাড়ের বসবাসকারীদের বসত ভিটা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। তিনি জরুরী ভিত্তিতে কর্তৃপক্ষকে ভাঙ্গন ঠেকাতে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..

Leave a Reply

Your email address will not be published.

© All rights reserved  2019 Rajbarisangbad
Theme Developed BY ThemesBazar.Com