॥মইনুল হক মৃধা॥ বন বিভাগের স্থানীয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব পালনে চরম অবহেলার কারণে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার ঢাকা-খুলনা জাতীয় মহাসড়কের পাশে রোপনকৃত বন বিভাগের দেড় কিলোমিটার এলাকায় চার বছর বয়সী ছোট-বড় ৫৪১টি গাছ কেটে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা।
গত ৭ই ফেব্রুয়ারী বিকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বিভিন্ন প্রজাতির এসব গাছ কর্তন করে তারা। কেটে ফেলা গাছ ওই এলাকার মানুষ টেনে নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় কৃষকের সরিষা, পেয়াঁজ ও রসুন ক্ষেতও নষ্ট হয়ে যায়।
বন কর্মকর্তাদের অভিযোগ, মহাসড়কের পাশে পায়ে চলার জন্য এইচবিবি’র রাস্তা তৈরীতে খননকাজে নিয়োজিত স্কেভেটর চালকের হুকুমে স্থানীয় রেললাইনের পাশে বসবাসরত লোকজন এসব গাছ কেটে নেয়। তবে সড়ক ও জনপথ(সওজ) বিভাগ থেকে এ ধরনের কোন নির্দেশনা দেওয়া হয়নি বলে দাবী করেছে সওজ।
গোয়ালন্দ উপজেলার বন কর্মকর্তা(ফরেষ্টার) মোঃ মনিরুজ্জামান খান জানান, গত ৭ই ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যার পর তাঁকে সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের উপকারভোগী সমিতির লোকজন গাছ কাটার কথা জানান। খবর পেয়েই তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে ঢাকা-খুলনা জাতীয় মহাসড়কের পূর্ব পাশে বাফার সারের গোডাউনের পর থেকে কেকেএস সেফহোম পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার রোপনকৃত সমস্ত গাছের চারা কেটে ফেলা অবস্থায় দেখতে পান।
তিনি আরো জানান, পরে তিনি জানতে পারেন, মহাসড়কের পূর্বপাশে সওজ এইচবিবির কাজ করতে স্কেভেটর দিয়ে মাটি খনন করছে। স্কেভেটর চালক স্থানীয় লোকজনকে রাস্তার সম্প্রসারণের কাজ হবে বলে গাছ কাটতে বলেছেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে রেললাইনের পাশে বসবাসরত ও ফকির পাড়ার লোকজন সমস্ত গাছ কেটে নিয়ে যায়।
সামাজিক বনায়ন প্রকল্প বাগানের সভাপতি আব্দুল আহাদ বলেন, ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের বৃক্ষরোপন তহবিল হতে বাংলাদেশ হ্যাচারী থেকে রেলগেট পর্যন্ত মহাসড়কের দুই পাশে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রায় ৪ হাজার চারা গাছ রোপন করা হয়। এর মধ্যে মিশু, মেহগনি, সেগুন, চিকরাশি, আকাশি গাছ রয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত ১১/১২ জনের নাম পাওয়া গেছে। তাদের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
সরেজমিনে গত ৮ই ফেব্রুয়ারী দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ঘুরে দেখা যায়, মহাসড়কের পূর্ব পাশের ওই অংশে সমস্ত গাছ গোড়া থেকে কাটা। বন বিভাগের লোকজন কাটা গাছের তল্লাশী করছেন। সড়কের পাশে বিভিন্ন পেঁয়াজ, রসুন ও সরিষা খেতের ভিতর দিয়ে গাছপালা টেনে নেওয়ায় ফসল নষ্ট করায় জমির মালিকগণ গালমন্দ করছেন। রেললাইনের পাশে অবস্থিত বিভিন্ন বাড়ী পিছনের ঝুপঝাড়ের ভিতর কাটা গাছ লুকিয়ে রাখতে দেখা যায়।
স্থানীয় ফকির পাড়ার নেয়ামত শেখ, খলিল সদরদারসহ কয়েকজন কৃষক বলেন, গত ৭ই ফেব্রুয়ারী বিকেলেও তারা ক্ষেত ভালো দেখেছেন। সকালে এসে দেখেন সরিষা, পেঁয়াজ, রসুন ক্ষেত নষ্ট করে ফেলেছে। জমির ওপর দিয়ে গাছপালা টেনে নেওয়ায় অনেক ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।
বন বিভাগের রাজবাড়ী জেলা রেঞ্জার মোঃ হাবিবুজ্জামান বলেন, তাৎক্ষনিকভাবে গোয়ালন্দের ফরেস্টারকে তদন্ত সাপেক্ষে গাছ কাটার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জেনেছি, সওজ’র রাস্তার পাশে নিয়োজিত স্কেভেটর চালকের নির্দেশের স্থানীয় গ্রামের লোকজন জোটবদ্ধ হয়ে সমস্ত গাছ কেটে ফেলেছে। বিষয়টি সওজ’র নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানিয়েছি।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ নওজিস রহমান বলেন, মহাসড়কের পাশে পায়ে চলার জন্য এইচবিবির কাজ চলছে। গাছগুলো সড়কের ঢালুতে রোপন করা। এ কাজের সাথে গাছ কাটার কোন সম্পর্ক নেই। গাছ কাটার প্রয়োজন হলে বনবিভাগকে চিঠি দিয়ে জানাতাম। বনবিভাগের জেলা রেঞ্জার রাতেই আমাকে বিষয়টি জানিয়েছে। তৃতীয় কোন পক্ষ এ ঘটনা ঘটিয়েছে কি না তাকে খতিয়ে দেখতে বলেছি। তারপরও স্কেভেটর চালক জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জাকির হোসেন বলেন, মহাসড়কের পাশ থেকে রাতের মধ্যে এতগুলো গাছের চারা এভাবে কেটে ফেলা খুবই ন্যাক্কারজনক ও বড় ধরনের অপরাধ। বিষয়টি আমি পরে জানতে পেরেছি। খোঁজ নিয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বন বিভাগকে বলেছি।