॥স্টাফ রিপোর্টার॥ করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ঠেকাতে এক সপ্তাহের সর্বাত্মক লকডাউন গত ১৪ই এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে। লকডাউন বাস্তবায়ন করতে রাজবাড়ী জেলার সর্বত্র আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের ভ্রাম্যমান আদালতের তৎপরতা ছিল ব্যাপক। লকডাউন চলাকালে ভ্রাম্যমান আদালতে জরিমানাও দিয়েছেন অনেকেই। লকডাউনের দ্বিতীয় দিনেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, রাজবাড়ী শহরে প্রবেশ মুখে বড়পুল এবং বাজারে প্রবেশে ১নং রেলক্রসিং ও এর আশপাশের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পুলিশ বাঁশের ব্যারিকেট দিয়ে চলাচল বন্ধ করে দেয়।
লকডাউনের প্রথম দিন বাংলা নববর্ষের পহেলা বৈশাখ হলেও জেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়কে পুলিশের ব্যাপক টহল ও বিভিন্ন স্থানে উপজেলার নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কঠোর তৎপরতার ফলে রাস্তা ছিল প্রায় ফাঁকা।
এক সপ্তাহের(১৪ই থেকে ২১শে এপ্রিল) লকডাউনের বিষয়ে গত সোমবার চলাচলের সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা দিয়ে প্রজ্ঞাপনে জারি করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, অতি জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। তবে বাইরে যেতে হলে অনলাইনে মুভমেন্ট পাশ নিয়ে তবেই বের হওয়া যাবে। সড়াবসবহঃঢ়ধংং.ঢ়ড়ষরপব.মড়া.নফ এই লিংকে গিয়ে ওষুধ, চিকিৎসা, কৃষিপণ্য পরিবহন, চাকরীসহ ১৪টি ক্যাটাগরিতে পাস দেয়া হবে। প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদানের পর শর্তসাপেক্ষে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অনুমতি দেয়া হবে।
নতুন করে সরকার ঘোষিত এক সপ্তাহের বিধি-নিষেধের প্রথমদিনে রাজবাড়ী শহরসহ জেলার সর্বত্র কঠোরভাবে লকডাউন পালিত হয়েছে। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হলেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জেরার মুখে পড়তে হচ্ছে।
রাস্তায় পুলিশের টহল গাড়ি, পণ্যবাহী ট্রাক, রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স, প্রাইভেটকার, রিকশা, মোটর সাইকেলসহ জরুরী প্রয়োজনে ব্যবহৃত সীমিত সংখ্যক যানবাহন ছাড়া তেমন কোন যানবাহন চোখে পড়েনি। প্রায় প্রতিটি যানবাহনকে থামিয়ে থামিয়ে কী প্রয়োজনে কোথায় যাচ্ছেন তা জানতে চাইছেন পুলিশ সদস্যরা।
শহরের অধিকাংশ রাস্তায় পুলিশের টহল গাড়ী ও সাইরেন বাজিয়ে এ্যাম্বুলেন্স চলাচল করতে দেখা গেছে। রাজবাড়ীর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সড়কে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চেক পোস্ট বসিয়ে যানবাহন ও যাত্রীদের জেরা করতে দেখা গেছে। তবে যারা ঘরের বাইরে বের হয়েছেন তাদের বেশিরভাগই জরুরী প্রয়োজনে বের হয়েছেন বলে প্রমাণ দেখিয়ে যেতে পারছেন।
গত সোমবার জারিকৃত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, করোনার বিস্তার রোধে ৭দিনের বিধি নিষেধের মধ্যে জরুরী পণ্য পরিবহন করা যাবে; উৎপাদন ব্যবস্থা চালু থাকবে; জরুরীসেবা দেয়া যাবে। শিল্প-কারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু রাখতে পারবে। সকাল ৯টা থেকে ৩টা পর্যন্ত উন্মুক্তস্থানে কাঁচা বাজার খোলা থাকবে এবং বাজার করা যাবে।
জরুরী পরিষেবার মধ্যে রয়েছে কৃষি উপকরণ, খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান। বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরগুলোর (স্থল, নদী ও সমুদ্র বন্দর) কার্যক্রম চলবে। টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারী-বেসরকারী) সেবা দেয়া যাবে। গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া) কর্মীরা পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। ওষুধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসাসেবা, মরদেহ দাফন/সৎকার সংশ্লিষ্ট কাজ করা যাবে। টিকা কার্ড দেখিয়ে টিকা নেয়ার জন্য যাতায়াত করা যাবে।
সব সরকারী-বেসরকারী অফিস বন্ধ থাকবে। তবে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করতে হবে। এ সময়ের মধ্যে জনসাধারণকে অতি জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা এবং সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত খাবারের দোকান ও হোটেল-রেঁস্তোরা খোলা রাখা যাবে না। শপিং মলসহ অন্যান্য দোকান বন্ধ রাখতে হবে।