মোহাম্মদ গোলাম আলী ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর সারা দেশ স্বাধীন হলেও অবাঙ্গালী-বিহারীদের শক্ত অবস্থান থাকার কারণে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে রাজবাড়ী মুক্ত হয় ১৮ই ডিসেম্বর।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আমিও নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে বৃদ্ধ মা-বাবা ও নবপরিণীতা স্ত্রীকে রেখে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। ২৫শে মার্চের পর থেকেই আমি গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে কাজ শুরু করি। একপর্যায়ে প্রতিবেশী কামাল ভাইয়ের সঙ্গে রওনা দেই ভারতের উদ্দেশ্যে- গেরিলা ট্রেনিং ও অস্ত্রের জন্য। এর আগে রাজবাড়ী রেলওয়ের মাঠে ও রাজবাড়ী সরকারী হাই স্কুলের বড় একটি কড়ই গাছের নীচে অবসরপ্রাপ্ত আর্মি সুবেদার বারী মন্ডলের কাছে অনেকের মতো আমিও তৎকালীন গণপরিষদ সদস্য কাজী হেদায়েত হোসেনের নেতৃত্বে ট্রেনিং নিয়েছিলাম। বাড়ী থেকে বেরিয়ে বিভিন্ন জায়গা ঘুরে পাংশা থানার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের কাজীপাড়া গ্রামে উপস্থিত হই-তৎকালীন গণপরিষদ সদস্য মোসলেম মৃধার বাড়ীতে। তার এক ছেলে খবির উদ্দিন মৃধা ছিলেন মুুক্তিযোদ্ধা। তিনি আমার সঙ্গী কামাল ভাইয়ের বড় বোনের দেবর। সেই সুবাদেই আমাদের সেখানে যাওয়া। আমরা খবর পাই, ক’দিন পূর্বে পাংশা অঞ্চলের কিছু মুক্তিযোদ্ধা ভারত থেকে ট্রেনিং এবং গোলাবারুদ নিয়ে সেখানে এসেছে। এতে আমাদের উৎসাহ-উদ্দীপনা বেড়ে গেল। যেভাবেই হোক তাদের সঙ্গে আমরা দেখা করবো। আমরা দু’জনে নাম-ঠিকানা লিখে পাঠিয়ে দিলাম। তারপর অপেক্ষা করতে থাকি। বেশ কিছুক্ষণ পর ক’জন মুক্তিযোদ্ধা অস্ত্র উঁচিয়ে আমাদের ঘরে ঢুকে পড়ে। আমরা দু’জন দাঁড়িয়ে সালাম বিনিময় করি। একজনের মুখ কাপড় দিয়ে বাঁধা ছিল, সে মুখের কাপড় সরিয়ে ফেলে। এ-কি! দোস্ত তুমি? উভয়ে উভয়ের বুকে জড়িয়ে ধরলাম। সে আর কেউ নয়, আমারই সহপাঠী মোঃ জিল্লুল হাকিম (বর্তমানে রাজবাড়ী-২ আসনের এমপি)। জিল্লু বললো-দোস্ত, তোমাদের এখন ভারতে যাওয়া ঠিক হবে না। বরং তোমরা দু’জনে এখানে থেকে আমাদের সাথে যুদ্ধ করো। কারণ, ভারত থেকে ট্রেনিং করা মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা আমাদের ইউনিটে খুবই কম। প্রয়োজনীয় ট্রেনিং আমরাই তোমাদেরকে দিয়ে দিব। এরপর আমাদের আর ভারতে যাওয়া হলো না। ওদের কাছেই থেকে যাই এবং ট্রেনিং নেই। পাংশা-কালুখালী-বেলগাছী-সূর্যনগর হয়ে আস্তে আস্তে রাজবাড়ীর দিকে অগ্রসর হতে থাকি। বেশ কয়েক জায়গায় রেললাইন তুলে ফেলে বিচ্ছিন্ন করি-যাতে শত্রুরা ট্রেনে করে চলাচল করতে না পারে। রাজবাড়ী থানার অস্ত্রভান্ডার লুট হওয়ার খবর পেয়ে ১৪ই ডিসেম্বর আমরা ৬/৭ জন মুক্তিযোদ্ধা হাতিয়ারসহ রাজবাড়ী থানায় আসি। সেখানে এসে শুনতে পাই ওসি ও অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা মাটিপাড়ার দিকে চলে গেছে। থানার পাশে দেখলাম ডাঃ উজির অনেকগুলো বন্দুক এবং কয়েকটি রাইফেল (থ্রি নট থ্রি) একসঙ্গে বেঁধে রিক্সায় করে নিয়ে যাচ্ছে। এক ফাঁকে প্যান্টের দু’পকেটে ২টি গ্রেনেড নিয়ে বাড়ী থেকে ঘুরে আসি। সেখানে আমার আব্বা একাই অবস্থান করছিলেন। নিরাপত্তার জন্য মা ও স্ত্রীকে নিশ্চিন্তপুর গ্রামের এক আত্মীয় বাড়ীতে রেখে এসেছিলেন। এরপর থানায় ফিরে এসে আমরা সূর্যনগর গ্রামে হোসেন চেয়ারম্যানের বাড়ীতে যাই। সেখানে কমান্ডার লালী (ডাঃ কামরুল হাসান লালী) ও আমাদের দলপতি জিল্লুসহ একত্রে বসে সিদ্ধান্ত হয়, ধুঞ্চি সিলিমপুর প্রাইমারী স্কুলে ক্যাম্প করে ত্রিমুখী আক্রমণ করে নিউ কলোনীর বিহারী-মিলিশিয়াদের দূর্গ ভেঙ্গে মুক্ত করা হবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৫ই ডিসেম্বর আমরা দুই দলে ভাগ হয়ে পড়ি। লালী ভাই উড়াকান্দা বাজার এলাকায় অবস্থান নেওয়ার জন্য রওনা দেন, আর আমরা রওনা দেই ধুঞ্চি সিলিমপুর প্রাইমারী স্কুলের উদ্দেশ্যে। সন্ধ্যায় সেখানে পৌঁছাই। আমাদেরকে দেখে স্থানীয়রা আনন্দে উল্লাস করতে থাকে। রাতে আমরা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে অপারেশনের নক্সা চূড়ান্ত করি। রাতেই আমরা ৩টি গ্রুপে(১০ জন করে) বিভক্ত হয়ে ত্রিমুখী আক্রমণের জন্য পজিশন নেই। দলপতির নির্দেশ ছিল, যখন ভোর ৪টা বাজবে, তখন তিন দিক থেকে একযোগে ফায়ার শুরু করবো। ওরা যেন কোনভাবেই বুঝতে না পারে ঠিক কতজন মুক্তিযোদ্ধা ওদের চারপাশ ঘিরে ফেলেছে। আমাদের ১ম ইউনিটের লিডার কাজী মাহবুব ভাই বিচক্ষণতার সাথে ধুঞ্চির মাহফিল ঘরের পাশে অবস্থান নিয়ে ধীরে ধীরে নিউ কলোনীর উত্তর পাশে বিনোদপুর নতুনপাড়া রাস্তার দিকে এগোতে থাকেন। কাছাকাছি পৌঁছাতেই রাস্তার ওপার থেকে রাতের নিস্তব্ধতা ভেদ করে আচমকা চাইনিজ রাইফেলের একঝাঁক গুলি আমাদের দিকে ছুটে আসে। আমাদের পক্ষ থেকেও শুরু হয় পাল্টা আক্রমণ। ওদের আক্রমণের ধরণ ছিল অনেকটাই এলোমেলো। বিনোদপুর নতুনপাড়ার রাস্তার পাড় ঘেঁষে শুধুই বাংকার আর বাংকার! বাংকারগুলো লুকিয়ে রাখতে তার দিয়ে মাটি-ঘাস-ডালপালা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। একদম কাছ থেকে দেখেও কোনভাবেই বোঝার উপায় নেই, এখানে বাংকার আছে। এক বাংকার থেকে অন্য বাংকারে অনায়াসেই যাওয়া যায়। বাংকারের মধ্যে খাবার এবং শোয়ার ব্যবস্থাও আছে। শুকুর আলী স্থানীয় সাহসী এক মুক্তিযোদ্ধা। সে আমাদের সামনে মাহবুব ভাইয়ের সঙ্গে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। হাতে তার ধারালো একটা সোল। সেই সোল দিয়ে ঝোঁপ-ঝাড় পরিষ্কার করতে করতে বীরদর্পে এগিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ বিহারীরা এলোপাতারীভাবে গুলি ছুড়তে থাকে। হঠাৎ শুকুর আলী চিৎকার করে লাফিয়ে উঠে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। লাল রক্তে তার সারাটা শরীর ভিজে গেল। তাকে ধরাধরি করে খুব দ্রুত সরিয়ে নেয়া হলো। এর কিছুক্ষণ পরই সে শাহাদতবরণ করলো। সকাল হওয়ার আগেই নির্ভীক সাহসী মুক্তিযোদ্ধা কাজী মাহবুব ভাই ছট্ফট্ করতে করতে ক্রমেই সামনের দিকে(নিউ কলোনীর দিকে) এগোতে থাকেন। পিছন থেকে আমরা তাকে বারবার সাবধানে এগোতে বললেও তিনি কোন কথাই কানে তুলছেন না, শুধুই এগিয়ে যাচ্ছেন। মাহবুব ভাই রাস্তা পার হয়ে নিউ কলোনীর ১ম কোয়ার্টারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। সামনেই বড় একটা খাল, সেখানে কোন পানি নাই। সেই খালে নামতেই মাহাবুব ভাইকে লক্ষ্য করে ওরা গুলি করা শুরু করলো। মাহবুব ভাই চিৎ হয়ে মরা মানুষের মতো পড়ে রইলেন। আমরা চিৎকার করে উঠলাম, জয় বাংলা বলে শ্লোগান দিয়ে আকাশ ভারী করে তুললাম। মাহাবুব ভাই কী আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে গেল নাকি? হালকা কুয়াশা ভেজা পরিবেশে তখনও সূর্যোদয় হয়নি। হঠাৎ লুকিয়ে থাকা বাংকারের মধ্য থেকে রাইফেল হাতে একজন হামাগুড়ি দিয়ে বেরিয়ে এলো। মুহূর্তের মধ্যে মরার মতো ভান করে থাকা মাহবুব ভাই তার এসএলআর থেকে গুলি করলে লোকটির মাথা ব্লাস্ট হয়ে(বিস্ফোরিত) সশব্দে ফেটে গেল। একটু পরে আরও একজন একইভাবে বের যখন বাংকার থেকে বের হচ্ছিল, ঠিক তখনই আবার মাহবুব ভাইয়ের ফায়ার। কিছুক্ষণ পর আরেকজন। এভাবেই মাহবুব ভাইয়ের গুলিতে ৩জন বিহারীর মৃত্যু হলো। কিছুক্ষণ পর মাহবুব ভাই জয় বাংলা বলে উঠে বসলেন। আমরাও জয় বাংলা বলতে বলতে তাকে জড়িয়ে ধরলাম। ততক্ষণে পূর্ব আকাশে নতুন আলোর ঝলকানি গাছপালার পাতার ফাঁকে ফাঁকে যেন বিজয়ের আলো উঁকি দিচ্ছে। আমরা খুব দ্রুত ১ম কোয়ার্টারের পাশে গর্ত করে বাংকার তৈরী করা শুরু করে দিলাম। এর মধ্যেই মুক্তিকামী এলাকাবাসী আমাদের জন্য খিচুড়ি খাওয়ার ব্যবস্থা করেছিল। দুপুরে ওদের পক্ষ থেকে ফায়ার শুরু হলো। আমরাও পাল্টা জবাব দিতে লাগলাম। ভাজনচালার পুকুরপাড় ও বাজার পাঠশালার পিছন দিক থেকে মিলিশিয়া পোশাক পড়া একদল বিহারী আমাদের দিকে এগিয়ে আসছিল। তখন বাংকার থেকে সাবু ভাই তার এলএমজি থেকে কয়েকটি ফায়ার করলেন। তখন ওরা দ্রুত হামাগুড়ি দিয়ে নিউ কলোনীর পাশে মসজিদের দিকে চলে গেলো। বিকাল হওয়ার আগেই আমাদের গোলাবারুদ বা রসদ প্রায় শেষ হয়ে এলো। তখন কমান্ডার জিল্লুর সাথে আলাপ করে মালেক ভাই একজনকে সঙ্গে নিয়ে সাইকেলযোগে মাটিপাড়ার দিকে রওনা হন। কৌশল হিসেবে বাবুল ভাই, লুলু ভাই, মাহাবুব ভাই, কামাল ভাইসহ আমরা মাঝে মাঝে কোয়ার্টারের মধ্যে বোতল-পেট্রোল-তেল-খোয়া ও পাটের দড়ি দিয়ে কৃত্রিম ‘বোতল-বোমা’ বানিয়ে আগুন লাগিয়ে নিক্ষেপ করতে থাকি। সন্ধ্যার পর ওদের গোলাগুলির শব্দ বেড়ে গেল। আমরাও থেকে থেকে ফায়ার করছি। এরই মধ্যে মালেক ভাই গোলাবারুদসহ যশোরের কমান্ডার কামরুজ্জামান ভাই ও তার সঙ্গীয় ইপিআরের কিছু সদস্যকে নিয়ে আমাদের সাথে যোগ দিলেন। তারা আমাদেরকে কিছু গোলাবারুদ দিলেন। এরপর আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যেভাবেই হোক আমরা রাতে এখানেই থাকব এবং জোরালো আক্রমণ চালাবো। আমরা যদি পিছু হটে এলাকা ত্যাগ করি তাহলে ওরা প্রতিহিংসামূলক আক্রমণ চালিয়ে নিরীহ মানুষকে গুলি করে মারবে। আমাদের উপস্থিতি ওদের কাছে ভয়ঙ্কর মনে হওয়ায় মরণ কামড় দিয়ে সারা রাত এলোমেলোভাবে ফায়ার করতে লাগল। ভোরে ওদের অবস্থান পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে হলো। আর কোন শব্দ নেই। আমরা আস্তে আস্তে সামনের দিকে এগোতে লাগলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা কোয়ার্টারগুলো সার্চ করতে থাকি এবং কয়েকটির কাঠের দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে বেশ ক’জন পুরুষ সদস্যকে (মহিলা ও শিশুদের বাদে) বের করে তাদেরই গর্ত করা বাংকারের মধ্যে ফেলে গুলি করা হয়। প্রত্যেক বিহারী মিলিশিয়াদের কাছে চাইনিজ থ্রি নট থ্রি রাইফেল ছিল একাধিক এবং ঐ সব বাসার মধ্যে গ্রাম-শহর থেকে আনা লুটের মালামালে ভরপুর ছিল। এমনকি গ্রাম থেকে কত নিরীহ মানুষের গরু, ছাগল, থালা-বাসন, সাইকেলসহ বাজার থেকে আনা সিগারেট, বিস্কুট, চিনি, চাউল, ডাউল, আটা আরো কতো কি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা বিহারীদের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ি। তাদের অবস্থান গাছে, বাসার ছাদে পানির ট্যাংকে, মসজিদের ভিতর বহু বিহারী মিলিশিয়া অবস্থান করছিল অস্ত্র হাতে। তাদের গুলিতে আমাদের বেশ ক’জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হয় এবং একজন শহীদ হন। এরপর মালেক ভাই, জিল্লু, সাবু ভাই, বাবুল ভাই, লুলু ভাই, কাজী মাহাবুব ভাইসহ আরো কিছু মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে নিউ কলোনী মসজিদটি সম্পূর্ণ ঘিরে ফেলি। দেখা যায় ঐ মসজিদের মধ্যে বেশ কিছু বিহারী ও মিলিশিয়া রাইফেল, বন্দুক, চাইনিজ রাইফেল নিয়ে আত্মগোপন করে ওঁৎ পেতে আছে। আমরা তাদেরকে আত্মসমর্পণ করতে বললেও তারা পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে। তারপর ওদের প্রতিরোধ মোকাবেলা করে আমরা অনেকক্ষণ চেষ্টার পর তাদেরকে মসজিদ থেকে বের করে আনি। তাদের হাতিয়ারগুলো নিয়ে তাদেরকে বন্দী করি। এভাবে আমরা দুই দিন এক রাত মরণপন যুদ্ধ করে নিউ কলোনীর পাক দোসরদের খতম করে মুক্ত করি। আমরা নিউ কলোনীর বিহারী ও মিলিশিয়াদের সঙ্গে যুদ্ধ করে তাদের সুরক্ষিত দূর্গ ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়ার পর মুজিব বাহিনীর কয়েকজন যোদ্ধা সেখানে এসে যোগ দেয়। ততক্ষণে অবশ্য যুদ্ধ শেষ। আগের রাতে (১৭ই ডিসেম্বর) অনেক বিহারী-মিলিশিয়া ফরিদপুর-কুষ্টিয়ার পথে পালিয়ে যায়। এভাবেই আমরা নিউকলোনীর বিহারীদের দূর্গের পতন ঘটিয়েছিলাম।
অপরদিকে, রাজবাড়ীর অন্য প্রান্তে (পূর্ব-দক্ষিণ অঞ্চল) আমাদের আরো বেশ কিছু মুক্তিযোদ্ধা ভাইয়েরা বীর বিক্রমে যুদ্ধ করেন। রাজবাড়ীর লোকোশেড এলাকার যুদ্ধে পাংশা-মাছপাড়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল মতিন ভাইয়ের (পরবর্তীকালে রাজবাড়ী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও পাংশা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, বর্তমানে জাসদ নেতা) ইউনিট সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তারা বিহারীদের সুরক্ষিত ঘাঁটি ভেঙ্গে চুরমার করে লক্ষ্মীকোল, নূরপুর, বিনোদপুর, রাজার বাড়ী এলাকা শত্রুমুক্ত করে। মতিন ভাইয়ের সঙ্গী ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা (রফিক, শফিক ও সাদি) ওই যুদ্ধে শাহাদতবরণ করেন। অন্য একটি প্রান্ত থেকে (বেড়াডাঙ্গা-চককেষ্টপুর) থেকে লোকোশেড অভিমুখে বিহারী মিলিশিয়াদের শক্ত ঘাঁটিতে অতর্কিত আক্রমণ করার সময় বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ইলিয়াছ ভাই বিহারীদের গুলিতে গুরুতর আহত হন। মরণপণ যুদ্ধ করে এভাবেই আমরা মুক্ত করেছিলাম রাজবাড়ীকে। (লেখক ঃ রাজবাড়ীর বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী, ডিজাইনার, ভাস্কর্য শিল্পী, লেখক ও ফটো সাংবাদিক)।