॥সুশীল দাস॥ ফরিদপুরের কানাইপুর বিসিকে অবস্থিত ‘পার্থ জুট মিলস লিঃ’ বিক্রির চুক্তি করে ১ কোটি ৫৪ লক্ষ টাকা নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে ওই জুট মিলের চেয়ারম্যান ও পাংশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দিবালোক কুন্ডু(জীবন কুমার কুন্ডু) সহ ২জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত আবেদন করা হয়েছে।
গত ৬ই আগস্ট রাজবাড়ী শহরের লক্ষ্মীকোল এলাকার মানিক মোল্লার ছেলে রাজু আহম্মেদ এই অভিযোগ করেছেন। এতে জীবন কুমার কুন্ডুর পাশাপাশি ওই জুট মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পাংশা পৌরসভার মৈশালা এলাকার বাসিন্দা তাপস কুমার পালকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, জীবন কুমার কুন্ডু ও তাপস কুমার পাল জুট মিলটি বিক্রির ঘোষণা দিলে রাজু আহম্মেদ এবং তার ২ ভাতিজী তানিয়া আক্তার শিরিন, তারিন আক্তার মেরিন ও ভগ্নিপতি সায়েম উদ্দিন ১২ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকায় মিলটি ক্রয়ের জন্য তাদের সাথে চুক্তি করেন। ওই সময় জুট মিলটি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ ছিল। মিলটি চালু করার জন্য মিলের বকেয়া বিদ্যুৎ বিল, শ্রমিকদের বকেয়া বেতন, মেশিনারীজের যন্ত্রাংশ ক্রয় ও মেইন্টেনেন্স, শেড মেরামত, জেনারেটরের যন্ত্রাংশ ক্রয় ও সার্ভিসিং, পেইন্টিং, পাট সরবরাহকারীদের পাওনা টাকা পরিশোধসহ বিভিন্ন পাওনাদারদের পাওনা টাকা পরিশোধের জন্য জীবন কুমার কুন্ডু ও তাপস কুমার পালকে নগদ ও চেক মারফত ১ কোটি ৫৪ লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়। ইসলামী ব্যাংক লিঃ-এর ফরিদপুর শাখার কর্মকর্তাদের মধ্যস্থতায় ‘দ্বিপক্ষীয় বিক্রয় চুক্তিনামা দলিল’ এর মাধ্যমে গত ০৪/০২/২০১৯ইং তারিখে জীবন কুমার কুন্ডু ও তাপস কুমার পাল তাদেরকে জুট মিলের দখল বুঝিয়ে দেন। পরবর্তী এক মাস সময়ের মধ্যে লাইসেন্স নবায়ন, আয়কর হালনাগাদসহ সকল কাগজপত্র হালনাগাদ করে জুট মিলের মালিকানা হস্তান্তরের কথা থাকলেও তারা তা করেনি। রাজু আহম্মেদরা জুট মিলের মেশিনগুলো চালু করে উৎপাদনে গেলেও কাগজপত্র ও মালিকানা হস্তান্তরের জটিলতার কারণে যথাযথভাবে উৎপাদন ও উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হতে থাকে। এমতাবস্থায় ব্যাংকের কর্মকর্তাগণ এবং রাজু আহম্মেদরা জীবন কুমার কুন্ডু ও তাপস কুমার পালকে মিলের মালিকানা হস্তান্তরের জন্য তাগাদা দিতে থাকলে তারা প্রতারণা করে সময়ক্ষেপণ ও স্থানীয় সন্ত্রাসীদের দিয়ে তাদেরকে হুমকী প্রদর্শন করতে থাকে। ফলে রাজু আহম্মেদরা সাময়িকভাবে মিলটি বন্ধ করতে বাধ্য হন। পরবর্তীতে বিভিন্ন পর্যায়ে দেন-দরবার করে সিদ্ধান্ত হয় যে, জীবন কুমার কুন্ডু ও তাপস কুমার পাল রাজু আহম্মেদদের দেয়া ১ কোটি ৫৪ লক্ষ টাকা ফেরত দিবে। কিন্তু অদ্যাবধি তারা সেই টাকা ফেরত না দিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এছাড়াও তারা জুট মিলটি অন্যত্র ভাড়া প্রদান করে টাকা-পয়সা গ্রহণ করেছে এবং রাজু আহম্মেদদের অজ্ঞাতসারে মিলের তালা ভেঙ্গে উক্ত ভাড়া গ্রহীতাদের কাছে মিলের দখল প্রদান করেছে। এমতাবস্থায় রাজু আহম্মেদদের পক্ষ থেকে জীবন কুমার কুন্ডু ও তাপস কুমার পালের নিকট থেকে টাকা আদায় করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশ সুপারের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে রাজু আহম্মেদ বলেন, গত দুই বছরে আমরা অপূরণীয় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। এ অবস্থায় দ্রুত আমাদের টাকাটা ফেরত না পেলে আমাদের আরও অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে আমরা রাজবাড়ীর পুলিশ সুপারসহ দায়িত্বশীল মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এ ব্যাপারে জীবন কুমার কুন্ডু বলেন, তাদের সাথে একটা স্ট্যাম্পে চুক্তিপত্র হয়েছিল। কিন্তু তারা চুক্তি ভঙ্গ করায় বিক্রি করা হয়নি। তারা আমার কাছে কোন টাকা পাবে না। বরং তাদের কাছেই আমি পাট বিক্রি বাবদ সাড়ে ১০ লক্ষ টাকা পাবো।
তাপস কুমার পালের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ করা যায়নি।