বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৩৭ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
রাজবাড়ী জেলায় নৌকার প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন পরিচালনায় যুবলীগের কমিটি গোয়ালন্দে মহাসড়কের পাশে বন বিভাগের ৫৪১টি গাছ কেটে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা রাজবাড়ীতে নিরাপদ অভিবাসন ও দক্ষতা উন্নয়ন শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত রাজবাড়ী থিয়েটারের আয়োজনে চার দিনব্যাপী নাট্যোৎসব শুরু রাজবাড়ী কালেক্টরেটের পক্ষ থেকে এডিসি মাহাবুর রহমানকে বিদায় সংবর্ধনা প্রদান রাজবাড়ী জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে এডিসিকে বিদায় সংবর্ধনা পাংশায় অস্ত্র মামলায় গ্রেফতারকৃত কৃষক লীগ নেতা হেনা মুন্সী শ্রীঘরে পাংশায় নিপা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে জনসচেতনতায় র‌্যালী ও আলোচনা সভা পাংশায় ইটভাটার মালিককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা কুয়াশায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে সোয়া তিন ঘন্টা ফেরী চলাচল বন্ধ

স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশনা

  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১১ জুন, ২০২০, ১২.৪০ এএম
  • ৮১৮ বার পঠিত

 অধ্যক্ষ মাওঃ আবুল এরশাদ মোঃ সিরাজুম মুনির 
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআনুল কারীমে এরশাদ করেছেন- “আল্লাহ তাআলা তোমাদের সকল প্রয়োজনীয় সামগ্রী দান করেন, যদি তোমরা আল্লাহর নেয়ামত গণনা করতে যাও, কখনোই পারবে না।’ (সূরা ইব্রাহিম, আয়াত নং-৩৪)
আমরা তাঁর অগণিত নিয়ামত নিয়ে বেচে আছি। তাঁর নেয়ামত রাজি ছাড়া এক মুহূর্ত আমাদের বাঁচার ক্ষমতা নেই। সুস্বাস্থ্য আল্লাহর নেয়ামত সমূহের মধ্যে সর্বোত্তম একটি নেয়ামত। এ জন্যই রসূল(সঃ) এরশাদ করেছেন- “শক্তিশালী মুমিন আল্লাহর নিকটে ভালো এবং অধিক প্রিয় দুর্বল মুমিনের চেয়ে। যদিও উভয় ই ভালো”। (মুসলিম শরীফ)।
অন্য হাদীসে রাসূল(সঃ) এরশাদ করেন। “দুটি নেয়ামতের ব্যাপারে অধিকাংশ মানুষই অসতর্ক থাকে, একটা হল সুস্থতা, আর একটা অবসর”। (বুখারী শরীফ)।
অপর হাদীসে আল্লাহর হাবীব বলেন “যে নিজের সুস্থতা, এবং পারিবারের সুস্থতা নিয়ে প্রভাত করল এবং তার কাছে সেদিনের খাদ্য বিদ্যমান, সে যেন পূর্ণ দুনিয়াটাই লাভ করল।” (তিরমিজি ও ইবনে মাজা)
পবিত্র কোরআনুল কারীম এবং হাদীসে নববীর বিভিন্ন স্থানে এ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা বিদ্যমান। পৃথিবীর দিকে তাকালে আমরা দেখি, আসলেই সুস্থতা আল্লাহর বড় নেয়ামত। এজন্যই বলা হয় “স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল”।
আল্লাহ রব্বুল আলামীন কেবল স্বাস্থ্য ও সুস্থতা দান করেননি বরং এগুলোকে সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সকল দিকনির্দেশনাও দান করেছেন। এমনকি রোগ ব্যাধির সৃষ্টি করে, স্বাস্থ্য বিনষ্ট করে, এমন সকল কিছুকে ইসলাম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, সাধারণত মানুষ খাদ্যভ্যাস, অলসতা, অতিরিক্ত পরিশ্রম, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, অপরিচ্ছন্নতা, শারীরিক ও মানষিক অস্থিরতা ইত্যাদি কারণে অসুস্থ হয়ে থাকে। কোরআন ও হাদীস শরীফে এগুলোর ব্যাপারে সুস্পষ্ট এবং কঠোর নির্দেশনা দান করা হয়েছে। নিম্নে তার কতিপয় উল্লেখ করা হলো।
১) খাদ্যভ্যাস : সুস্বাস্থ্যের জন্য খাদ্য অভ্যাস সবচেয়ে প্রয়োজনীয়। এজন্যই কোরআন-সুন্নাহর পরতে পরতে খাদ্যাভ্যাসের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা এবং নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এমনকি খাদ্য উপার্জন, সংগ্রহ, পরিপাক, গ্রহণের পরিমাণ ইত্যাদি সকল বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। যেমন
ক) ক্ষতিকর বস্তু খাওয়া যাবেনা : যে সমস্ত খাদ্য খেলে মানুষের ক্ষতি হয় সেগুলো ইসলামে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আল্লাহ রব্বুল আলামীন বলেছেন নিশ্চয় মদ, জুয়া, অনসাব, আঝলাম এগুলো অপবিত্র এবং শয়তানের কাজ অতএব সে গুলোকে তোমরা বর্জন করো। “(সূরা মায়েদা আয়াত নং-৯০)” “নিশ্চয়ই তোমাদের উপরে মৃত্যু প্রাণী, রক্ত, শূকরের গোশত, এবং আল্লাহর নাম নিয়ে জবেহ করা হয় নাই, এমন সমুদয় পশুকে হারাম করা হয়েছে।” (সূরা মায়েদা আয়াত নং-৩)
“তোমরা পবিত্র বস্তু খাও যা তোমাদেরকে আমি রিযিক হিসাবে দিয়েছি, তবে সে ক্ষেত্রে সীমা অতিক্রম করবে না।”
খ) প্রয়োজনের অতিরিক্ত না খাওয়া : প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করলে মানুষের দৈহিক ক্ষতি সাধিত হয় তাই আল্লাহ তাআলা সেটাও নিষেধ করেছেন। এরশাদ হয়েছে “তোমরা খাও এবং পান করো কিন্তু অপব্যয় করবে না। নিশ্চয় আল্লাহ রাব্বুল আলামিন অপব্যয়কারীদের পছন্দ করেননা।” (সুরা শুরা আয়াত নং-৩১)।
এমনকি কারো জন্য কোন রোগের কারণে কোন হালাল বস্তু যদি মৃত্যুর কারণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, সেটা গ্রহণ করা ঐ ব্যক্তির জন্য হারাম। আর যদি ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে ওই জিনিস গ্রহণ ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে যথাযথ নয়।”
২) অলস না হয়ে পরিশ্রমী হওয়া : চিকিৎসা বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে মানুষের সুস্থতার জন্য কায়িক পরিশ্রম বাধ্যতামূলক। যতদিন মানুষ কায়িক পরিশ্রম করেছে, ততদিন মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থেকেছে। রোগবালাই কম হয়েছে। প্রযুক্তির এই যুগে আমরা কায়িক পরিশ্রম থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। বিভিন্ন বিপদ-আপদ রোগ-বালাই বেশি হচ্ছে। এ জন্যই ডাক্তারগণ যেকোনো মূল্যে সকাল-সন্ধ্যায় অথবা যেকোনো সময় হাটাহাটি সহ কিছু কায়িক পরিশ্রমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভাবে নির্দেশ দিচ্ছেন। আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে রসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়া করেছেন এবং উম্মতদেরকে এ দোয়া করতে নির্দেশ দিয়েছেন “হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, অপারগতা, অলসতা, কাপুরুষতা, কৃপণতা, ঋণ গ্রস্ততা, মানুষের কর্তৃত্বাধীন হওয়া থেকে।”
আল্লাহ রব্বুল আলামীন বলেছেন : “পুরুষ ও মহিলাদের মধ্য থেকে ঈমানের সাথে যে ভালো কাজ করবে, অবশ্যই আমি তাকে পুত-পবিত্র হায়াত দান করব।”
অন্যত্র আল্লাহ তা’আলা বলেন “একজনের কর্মফল অন্যকে দেওয়া হবে না।” এমন আরও অনেক আয়াত ও হাদীস রয়েছে যা দ্বারা কায়িক পরিশ্রমের ফজিলত ও গুরুত্ব যথার্থ ভাবে প্রমাণিত হয়।
৩) প্রয়োজনীয় বিশ্রাম গ্রহণ : শারীরিক সুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয় বিশ্রাম গ্রহণ ও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু কাজ করলেই চলবে না শরীরকে প্রয়োজনীয় বিশ্রাম দিতে হবে। এজন্যই তো আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনে কারীমে বলেছেন “আমি তোমাদের জন্য ঘুমকে করেছি ক্লান্তি দূরকারী, রাতকে করেছি আচ্ছাদন এবং দিনকে করেছি অন্নপ্রাশনের সময়।”
রাসুলে পাক সাঃ এরশাদ করেছেন “তোমার শরীরের জন্য তোমার উপর হক রয়েছে তোমার চোখের জন্য তোমার উপর হক রয়েছে।
৪) অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন : অসুস্থতার অন্যতম আরেকটি কারণ অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন। এটা পরীক্ষিত সত্য, যারা যত অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করেন তাদের অসুস্থতা ততো বেশি হয়ে থাকে। এজন্যই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পুরা ইসলামটাকেই একটা নিয়ন্ত্রনের আচ্ছাদনে ঢেকে দিয়েছেন। ইসলামের প্রত্যেকটা কাজ নির্দিষ্ট নিয়ম নীতি ও রুটিন মাফিক হয়ে থাকে। নামাজ-রোজা, হজ্ব, যাকাত খাওয়া-ঘুম বিশ্রাম সবই নিয়ন্ত্রণ মেনে করতে হয়। ইসলামে স্বেচ্ছাচারিতার কোন সুযোগ নেই।
৫) অপরিচ্ছন্নতা : অপরিচ্ছন্নতা অসুস্থতার অন্যতম আরেকটি কারণ। এজন্যই ইসলাম পরিছন্নতা অর্জন ফরজ করেছে। পাক সাল্লাল্লাহু ইসলাম বলেন “পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ”। প্রত্যেকটা এবাদত করতে হয় পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যমে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া যেমন ফরজ ঠিক তেমনি ভাবে তার জন্য ওযু করা ফরজ। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেছেন
“যখন তোমরা নামাযের দাঁড়াবে তখন তোমাদের চেহারা ধৌত করো, তোমাদের দুই হাত কনুইসহ ধৌত করো, তোমাদের মাথা মাছেহ করো এবং পা ও গ্রীবাদেশসহ ধৌত করো। কেবল ওযু নয় ইসলাম অবস্থাভেদে গোসলকে ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাত, মুস্তাহাব, সাব্যস্ত করেছে। এছাড়াও পায়খানা পেশাবের পর নির্দিষ্ট স্থান পরিচ্ছন্ন করা ফরজ করা হয়েছে। শুধু তাই নয় খাৎনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আধুনিক বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে খাতনা ওয়ালা মানুষেরা অন্যদের চেয়ে অনেক কম এইডস সিফিলিস গনোরিয়ায় আক্রান্ত হয়। এছাড়া শরীরের অতিরিক্ত লোম, কাটা নখ, ইসলামে বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে। এক কথায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার এমন কোন সাইট নেই যার ব্যবস্থা ইসলাম দেয়নি।
৬) অশ্লীলতা : আধুনিক বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে অশ্লীলতা মানুষের স্বাস্থ্যের বিশাল ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। মানষিক ও দৌহিক রোগ তৈরি করে থাকে। বর্তমান পৃথিবীর অন্যতম মারাত্মক রোগ এইডস অশ্লীলতারই ফল। এটাতো প্রত্যক্ষ রোগ। পরোক্ষভাবেও অনেক রোগ তৈরি করে, বালা-মুসিবত, মহামারী সৃষ্টি করে। রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন
“কোন সম্প্রদায়ের মধ্যে যখন অশ্লীলতা বৃদ্ধি পায়, এমনকি তা প্রকাশ্য আকার ধারণ করে, তখন তাদের মধ্যে মহামারী এবং বিভিন্ন নতুন রোগ সৃষ্টি হয় যা তাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে ছিল না।”
মূলত অশ্লীলতা এমন এক মারাত্মক রোগ, যা মানুষের মনুষত্ব কে নষ্ট করে পশুর চেয়ে অধম করে দেয়। পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে দেখুন বরং বাংলাদেশের দিকে তাকালেও প্রচুর উদাহরণ পাবেন, কোন প্রাণী তার সন্তানকে হত্যা নাকরলেও অশ্লীলতায় নিমজ্জিত হয়ে, পরকীয়ায় লিপ্ত হয়ে, আমাদের সমাজের মা-বাবারা আপন সন্তানকে হত্যা করতে সন্তানরা বাবা-মাকে হত্যা করতে দ্বিধা করছে না। আল্লাহ বলেছেন “আমি অনেক সংখ্যক জীন এবং মানবদ্বারা জাহান্নামকে পূর্ণ করব, যাদের অন্তর আছে কিন্তু তা দ্বারা বুঝেনা, চোখ আছে তা দ্বারা দেখেনা, কান আছে তা দ্বারা শোনে না, তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত বরং তার চেয়েও নিকৃষ্ট। তারা হল(আল্লাহর আদেশ-নিষেধ হতে) গাফেল সম্প্রদায়।”
৭) মানসিক অস্থিরতা : মানসিক অস্থিরতা মানুষের শারীরিক রোগের আরেকটি অন্যতম কারণ। পৃথিবীর মানুষ যত বৈষয়িক হয়ে যাচ্ছে, মানসিক রোগীর সংখ্যা ততই বেড়ে যাচ্ছে। আমেরিকার মতো উন্নত রাষ্ট্র, সেখানেই মানসিক রোগীর সংখ্যা বেশি। বুঝা গেল মানসিক অস্থিরতা কত মারাত্মক। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য মানসিক রোগ থেকে মুক্ত থাকার জন্য বাস্তব যা প্রয়োজন সেগুলো থেকে মানুষ অনেকটাই দূরে। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ মানসিক অস্থিরতা দূর করার জন্য মেডিটেশন, জোক ইত্যাদি করছে, কিন্তু তেমন একটা কাজ হচ্ছে না আবার তাতে কল্পনার আশ্রয় নিতে হচ্ছে। অথচ ইসলাম চমৎকারভাবে মানসিক অস্থিরতা দূর করার ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
ক) তাকদীরে বিশ্বাস। ভালো মন্দ সবকিছুর মালিক আল্লাহ। আমার কাজ চেষ্টা করা। ফল দেওয়ার মালিক আল্লাহ। পেলে শুকরিয়া আদায় করতে হবে। না পেলে ভাবতে হবে এটা আমার ভাগ্যে ছিল না। ভালো কাজের চেষ্টা সোয়াব আমি আখেরাতে পাবে। আফসোসের কিছু নেই।
খ) আল্লাহ আমাকে দেখছেন “কোন চোখে তাকে দেখতে পারে না, তিনি সকল চোখ দেখেন। তিনি সূক্ষদর্শী এবং সকল বিষয়ে খবর ওয়ালা।
গ) একাগ্রতার সাথে এবাদত : রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন “আল্লাহর এবাদত কর যেন আল্লাহকে দেখছ। যদি তেমনটি না হয় তাহলে অন্তত এটা ভাবো তোমার আল্লাহ তোমাকে দেখছেন।”
সফল মুমিনের গুণাবলী বর্ণনা করতে আল্লাহ তা’আলা বলেন “যারা একাগ্রতার সাথে নামাজ আদায় করে।”
ঘ) আল্লাহ আমার সাথেই আছেন : আল্লাহ তা’আলা বলেন “তোমরা যেখানেই থাকো না কেন আল্লাহ তোমাদের সাথেই আছেন।” “আমি বান্দার স্বর্গের চেয়েও নিকটে আছি।”
ঙ) বেশি বেশি আল্লাহর জিকির আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন “অবশ্যই আল্লাহর জিকিরে মন প্রশান্তি প্রাপ্ত হয়।”
চ) অসুস্থতায় গুনাহের কাফফারা হয় : রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন- “মুসলমান ক্লান্তি, অবসাদে অসুস্থতা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট, উৎকণ্ঠা, যাতেই নিপতিত হোক, এমন কি যদি কোন কাটাও বেঁধে, তার দ্বারা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার গুনাহের কাফফারা করবেন।”
৮) রোগের চিকিৎসা করা ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা : রোগ দেওয়ার মালিক যেমন আল্লাহ রোগ সারানোর মালিক ও তেমনি আল্লাহ। আল্লাহ নিজেই বলেছেন “আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যদি কাউকে কোন কষ্টে ফেলেন কেউ তা প্রতিরোধ করতে পারে না, আবার তিনি যদি ভালো কিছু দিতে চান, কেউ তার সে ভালো থেকে দূরে রাখতে পারে না।”
তাই বলে তাওয়াক্কুলের নামে রোগের চিকিৎসা না করে বসে থাকার সুযোগ নাই। কারণ ইসলামী তাওয়াক্কুল হল বান্দা নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী প্রচেষ্টা চালাবে, তারপর আল্লাহর উপর ভরসা করবে। হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেছেন “ঐ ব্যক্তি তাওয়াক্কুল কারী নন যিনি ক্ষেতে বীজ বপণ না করে আল্লাহ খাদ্য দিবেন বলে বসে থাকে, বরং ঐ ব্যক্তি তাওয়াক্কুল কারী যে ক্ষেতে বীজ বপণ করে তারপর আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে। এজন্য ইসলামের বিধান হলো যদি কারো রোগ হয় তাহলে তার চিকিৎসা করাতে হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছে “হে আল্লাহর বান্দাগণ তোমরা রোগের চিকিৎসা কর। কেননা আল্লাহ তায়ালা এমন কোন রোগ দেন নাই যার শেফা নাই। শুধুমাত্র মৃত্যু ব্যতিত।”
৯) অগ্রিম প্রতিরোধের ব্যবস্থা : কেবল রোগ হলেই চিকিৎসার ব্যবস্থা নয় বরং রাসুলুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগেই সর্তকতা অবলম্বন করতে বলেছেন।
এরশাদ করেছে “দুটি নেয়ামতের ব্যাপারে মানুষ খুব অবহেলা করে থাকে, একটা হলো সুস্থতা, আরেকটা হলো অবসর।”
অন্য হাদীসে এসেছে পাঁচটি বস্তুর পূর্বে পাঁচটি বস্তুকে গনিমত বলে মনে করো : ১) বার্ধক্য আসার পূর্বে তোমার যৌবনকালকে, ২) অসুস্থতার পূর্বে তোমার সুস্থতাকে, ৩) ব্যস্ততার পূর্বে তোমার অবসর সময়কে, ৪) গরীবির আসার পূর্বে তোমার ধনাঢ্যতাকে, ৫) মৃত্যুর পূর্বে তোমার হায়াতকে।
১০) সংক্রমনের সম্ভাবনায় : সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকলে মানুষ কি করবে সে ব্যাপারেও ইসলাম দিয়েছে সুস্পষ্ট নির্দেশনা। সংক্রমণকে অবজ্ঞা করা আবার সংক্রমণ নিয়ে বাড়াবাড়ি উভয় ই ইসলামে নিষিদ্ধ।
এজন্যই যখন এক সাহাবী আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ। আমার উট গুলি হরিণের মত চমৎকার সুস্থ থাকে, হঠাৎ একটা চর্ম রোগী উট তাদের ভিতরে প্রবেশ করায় তার থেকে সংক্রমণে অন্যন্য গুলি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি বললেন, তাহলে প্রথমটাকে সংক্রমণ করল কে? পাশাপাশি আবার সংক্রমনের ব্যাপারে সতর্ক করে বলেছেন, “অসুস্থদের কে সুস্থ দের সাথে মিশানো হবেনা।”
অন্য হাদীসে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন “তোমরা যখন শুনবে কোথায় মহামারির শুরু হয়েছে, সেখানে প্রবেশ করবে না। আবার যেখানে অবস্থান করছ সেখানে যদি মহামারী লাগে, সেখান থেকে বের হবে না।”(বুখারী শরীফ)
অন্য হাদীসে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন। “হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মহামারী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছি, তখন তিনি আমাকে বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন একে কারো নিকটে গজব হিসেবে প্রেরণ করেন। কিন্তু মুমিনের জন্য সেটাকে রহমত বানিয়ে দিয়েছেন। অতএব কোন মুমিন যদি ধৈর্য্যর সাথে এবং সওয়াবের নিয়েতে এই বিশ্বাস নিয়ে নিজের ঘরে অবস্থান করে যে, আল্লাহ তার ভাগ্যে যা রেখেছেন তা ভিন্ন কোন কিছুই তাকে স্পর্শ করবে না। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাকে একটা শহীদের সওয়াব দান করবেন।”
রোগীর সেবা করা : রোগীর সেবা করা ইসলামে গুরুত্বপূর্ণ একটি এবাদত। এ ব্যাপারে লিখতে গেলে বিশাল একটা বই হয়ে যাবে, তবুও কুরআন-সুন্নাহর শেষ হবে না। সেবা সুস্থতা তো অনেক বড় বিষয়। শুধু রোগী দেখতে গেলে কি পরিমাণ সব পাওয়া যাবে নিম্নোক্ত হাদীস তা সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছে
“যদি কোন মুসলমান সকালে কোন রোগীকে দেখতে যায় তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত সত্তর হাজার ফেরেশতা তার জন্য দোয়া করে, আর যদি কেউ বিকালে রোগীকে দেখতে যায় তবে পরদিন সকাল পর্যন্ত ৭০ হাজার ফেরেশতা তার জন্য দোয়া করতে থাকে। আর সে জান্নাতে একটি বাগান লাভ করবে।” (তিরমিজি শরিফ)। এবং আরো অসংখ্য হাদিস বিদ্যমান।
ইসলামকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মনোনীত করেছেন মানবসহ সমস্ত বিশ্ব-জাহানের কল্যাণের জন্য এবং সে কল্যাণ কেবল আখেরাতের নয়, বরং দুনিয়া-আখিরাত উভয় জাহানের জন্য। এজন্যই যেখানে ইসলাম সেখানে শান্তি। যেখানে ইসলাম নেই সেখানেই অশান্তি। বলতে পারেন মুসলমানের মধ্যে তো অহরহ অশান্তি হচ্ছে। আসলে এর কারণ মুসলমান তো ইসলামকে যথাযথ পালনও করছে না। এসলাহে নফস তথা আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র সংশোধনের চিন্তা তো নাই বললেই চলে। এ আলোচনাতো অনেকে আর বিশ্বাসই করতে চান না। অনেকে তো আবার এটা বেমালুম ভুলেই গেছি যে ইসলাম শক্তির জোরে প্রতিষ্ঠিত হয় নাই বরং ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নীতি-নৈতিকতা সুন্দর চরিত্র সামাজিক শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা সর্বোত্তম পদ্ধতি ইত্যাদির মাধ্যমে। হা হা বেশকিছু যুদ্ধ করতে হয়েছে কিন্তু সেটা আক্রমনাত্মক কখনোই ছিলনা তা ছিল প্রতিরোধমূলক। যাই হোক আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে ইসলামের সৌন্দর্য্য জানার আমল করার তৌফিক দান করুক। কোরআন সুন্নাহ ভিত্তিক স্বাস্থ্যবিধি মেন চলার তৌফিক দান করুন। আল্লাহ রব্বুল আলামীন আমাদেরকে জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করুন। আমিন।

(লেখক : মাওলানা আবুল এরশাদ মোঃ সিরাজুম মুনির, অধ্যক্ষ ভান্ডারিয়া ছিদ্দিকীয়া কামিল মাদ্রাসা, রাজবাড়ী)।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..

Leave a Reply

Your email address will not be published.

© All rights reserved  2019 Rajbarisangbad
Theme Developed BY ThemesBazar.Com