॥এম.এইচ আক্কাস॥ গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় দু’গ্রুপের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনায় রেজাউল মোল্লা ওরফে আবু ডাক্তার(৩৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে।
তিনি দেবগ্রাম ইউনিয়নের মুন্সিপাড়া গ্রামেরর মোবারক মোল্লার ছেলে। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় উভয় গ্রুপের অন্তত ২০জন গুরুতর জখম হয়েছেন। ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও নবনির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম ও সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান আতর আলী সরদারের সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নিহত রেজাউল করিম আবু ডাক্তার হাফিজুল চেয়ারম্যানের মেয়ের দেবর।
আহতদের মধ্যে আতর আলী সরদারের ছেলে ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বাবলু(৪২), বাবলুর মামা আঃ সালাম বেপারী(৫৫), আঃ সাত্তার খান(৩০), টোকন সরদার(২৮), গাজী সরদার(৩০), হাফিজুল চেয়ারম্যানের সমর্থক নিজাম শেখ(৩৫), রহমান সরদার(৪৫), আলো মোল্লা(৩৮) নাম জানা গেছে। এদেরকে গোয়ালন্দ হাসপাতালে আনা হয়। বাকিদের অন্যান্য স্থানে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে এবং কয়েক জনের এখনো আশংকাজনক অবস্থায় রয়ে গেছে বলে জানা গেছে। আহতদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় ৫জনকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
কাউন্সিলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ও গোয়ালন্দ উপজেলা আওয়ামীলীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ফজলুল হক জানান, গতকাল ১৪ই অক্টোবর বিকেলে দেবগ্রাম ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিল স্থানীয় দেবগ্রাম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলছিল। প্রথম অধিবেশন শেষে শুরু হয় কাউন্সিলরদের ভোট গ্রহন পর্ব। ভোট গ্রহন স্থলে উপস্থিত থাকা নিয়ে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলামের ছেলে বকুল ও সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান আতর আলী সরদারের ছেলে ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বাবলুর মধ্যে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এর জের ধরে পরবর্তীতে দুই গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভোট গ্রহন শেষে হাফিজুল চেয়ারম্যানের সমর্থকরা আতর চেয়ারম্যানের বাজারে আসলে সেখানে উভয় গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষ ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ সময় হাফিজুলের সমর্থকরা আতর চেয়ারম্যানের বাড়িতে হামলা চালায়।
এদিকে হামলার খবর পেয়ে গোয়ালন্দ ঘাট থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। পরে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে স্থানীয়রা। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হাসপাতালে পর্যায়ক্রমে আহতদের আনা হচ্ছিল। এ ঘটনার পর থেকে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে সাবেক চেয়ারম্যান আতরের ছেলে ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বাবলু চিকিৎসাধীন অবস্থায় জানান, কাউন্সিলস্থলে হাফিজুল চেয়ারম্যান চরমপন্থী সন্ত্রাসীদের জড়ো করে কাউন্সিলকে প্রভাবিত করছিল। এর প্রতিবাদ করায় তারা আমার উপর চড়াও হয়। পরবর্তীতে সংগঠিত হয়ে আমাদের লোকজন ও বাড়ি ঘরে হামলা চালিয়ে জখম ও ভাংচুর করে।
ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাফিজুল ইসলাম বলেন, ওরা আমার মেয়ের দেবর আবু ডাক্টারকে নির্মম ভাবে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগের কাউন্সিল হলেও যুবলীগ নেতা বাবলু সেখানে জোরপূর্বক অবস্থান করে কাউন্সিলে বিঘœ ঘটাচ্ছিল। এ নিয়ে সামান্য বাগবিতান্ডা হলেও পরবর্তীতে ওরা সঙ্গবন্ধ হয়ে আমার লোকজনের উপর হামলা চালায়। চরমপন্থীদের অবস্থানের অভিযোগ সঠিক নয়।
এ ব্যাপারে গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি মোঃ রবিউল ইসলাম জানান, হামলার ঘটনা শুনে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করি। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে।