॥স্টাফ রিপোর্টার॥ বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ডের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে প্রথমেই আদালতে লোমহর্ষক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেছে ইফতি মোশাররফ সকাল(২১)।
গ্রেফতারকৃত সকাল রাজবাড়ী জেলা শহরের ধুঞ্চি ২৮ কলোনী গ্রামের ৩৯৫নং বাড়ীর ফকির মোশাররফ হোসেন ও রাবেয়া মোশাররফের ছেলে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে থাকা সকাল স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিতে রাজী হলে গত ১০ই অক্টোবর দুপুরে পুলিশ তাকে আদালতে নিয়ে যায়। সেখানে নেয়ার পর সকাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদবীর ইয়াসির আহসান চৌধুরীর নিকট ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে। পরে তাকে কারাগারে পাঠায় আদালত।
জানা গেছে, জবানবন্দীতে ইফতি মোশাররফ সকাল আবরারকে মারধর করার বিষয়ে কার কী ভূমিকা ছিল তা বিশদভাবে বর্ণনা করেছে। সে বলেছে, ‘মেহেদী হাসান রাসেল(বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক), অনিক সরকার (সাংগঠনিক সম্পাদক)সহ ২০/২৫জন আবরারকে মারধর করে। ক্রিকেট খেলার স্টাম্প ও মশারী টাঙানোর লোহার রড দিয়ে আঘাত করার পাশাপাশি কিল, ঘুষি, চড়-থাপ্পড় দেওয়া হয়। একদল মারধর করে বেরিয়ে গেলে আরেক দল এসে মারধর করে। বাইরে থেকে আবার তারা ফিরে এসে মারধর করে। এভাবে দফায় দফায় আবরারকে মারধর করা হয়। একপর্যায়ে আবরার নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এরপর তাকে ওই কক্ষ(বুয়েটের শেরে বাংলা হলের ২০১১ নং কক্ষ) থেকে বের করা হয়। এরপর ডাক্তার ডাকা হয়। ডাক্তার পরীক্ষা করে জানায় আবরারের মৃত্যু হয়েছে’।
উল্লেখ্য, ইফতি মোশাররফ সকাল রাজবাড়ী পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের মোশাররফ ফকীরের ছেলে। বুয়েটের বায়ো মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সকাল বুয়েট ছাত্রলীগের উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ছিলেন। আবরার হত্যাকান্ডে গ্রেফতার হওয়ার পর তাকে প্রথমে ছাত্রলীগ থেকে এবং পরে বুয়েট থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
অভিযুক্ত সকালের বাবা ফকির মোশাররফ হোসেন জানান, টেলিভিশনে সংবাদ দেখে জানতে পারি ছেলে সকাল আবরার হত্যায় জড়িত। কিন্তু কোনভাবেই এটি বিশ্বাস করতে পারি না। গত কোরবানীর ঈদের পর সকাল ক্যাম্পাসে ফিরে যায়। এরপর আর বাড়িতে আসেনি। রাজবাড়ীতে থাকাকালীন তার মধ্যে উচ্ছৃঙ্খল কিছু দেখিনি। কোন রাজনৈতিক সংগঠন তো দূরের কথা সে কোন আড্ডাতেও যেত না। সব সময় পড়াশুনা নিয়ে থাকতো। গত ৩মাস আগে সকাল জানায় ক্যাম্পাসে সে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে।
তবে ফকির মোশাররফ হোসেন বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ডের আবরার হত্যার সঠিক বিচার দাবী করে বলেন, সুষ্ঠ তদন্ত হলে আমার ছেলে সকাল নির্দোষ প্রমাণিত হবে।
সকালের ছাত্র রাজনীতি করা প্রসঙ্গে রাজবাড়ী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ সাইফুল ইসলাম এরশাদ বলেন, সকালের পরিবার বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। সকাল কোনদিন ছাত্রীগের কোন কর্মসূচীতে আসেনি।
তিনি আরো বলেন ২০১৪ সালে এসএসসিতে ভাল ফলাফল অর্জনের জন্য সকাল ইসলামী ছাত্র শিবির থেকে সংবর্ধিত হন। তিনি আরো বলেন সকালসহ অনান্য হত্যাকারীদের যেন দৃষ্টান্তমূলক শান্তি হয়।
রাজবাড়ী পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ শফিকুল ইসলাম সফি জানান, বুয়েটের এমন ঘটনা দুঃখজনক। তিনি পত্রিকার মাধ্যমে দেখেছেন রাজবাড়ীর ইফতি মোশাররফ সকাল এই হত্যাকান্ডের ৫নং আসামী। তিনি বলেন সকালের পিতার পরিবার বিএনপির রাজনীতি করে। তার ছেলে কিভাবে ছাত্রলীগ করে সেটা আশ্চার্যের। এই ঘটনার সুষ্ঠ বিচার দাবী করে তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের আওয়ামী লীগের সভাপিত সকল হত্যাকান্ডের সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে বিচার নিশ্চিত করেছেন, আবরার এই হত্যাকান্ডেরও সুষ্ঠ বিচার হবে।
আবরারকে নৃশংসভাবে হত্যার সাথে রাজবাড়ীর ইফতি মোশাররফ সকালের জড়িত থাকার খবর প্রকাশের পর জেলাবাসী তাকে ধীক্কার দিচ্ছে।
এদিকে আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় আরও ১জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের(ডিএমপি) গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগ। গ্রেফতারকৃত আসামীর নাম মোঃ মাজেদুল ইসলাম(২১)। তিনি বুয়েটের এমএমই বিভাগের ১৭তম ব্যাচের ছাত্র।
ডিএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদুর রহমান জানান, শুক্রবার ভোর ৪টায় সিলেটের শাহ কিরন এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা দক্ষিণ বিভাগের ধানমন্ডি জোনাল টিম। মাজেদুল আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামী বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গত ৬ই অক্টোবর দিনগত মধ্যরাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের নিচতলা ও দুইতলার সিঁড়ির করিডোর থেকে আবরার ফাহাদের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন সোমবার দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে আবরারের ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডাঃ সোহেল মাহমুদ লাশের ময়না তদন্ত করেন।
তিনি বলেন, ‘আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।’ নিহত আবরার বুয়েটের ইলেকটিট্রক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শেরে বাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন।
এ ঘটনায় নিহতের বাবা মোঃ বরকত উল্লাহ চকবাজার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।