॥মেহেদুল হাসান আক্কাছ॥ পদ্মা নদীর পানি কমলেও দৌলতদিয়ায় ¯্রােতের তীব্রতা ও ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। তীব্র স্রোতে টানা এক সপ্তাহ ধরে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল চরম ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। জনদূর্ভোগ কমাতে এ নৌরুট দিয়ে শুধু যাত্রীবাহি যানবাহন পারাপারের কথা থাকলেও অনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে পন্যবাহি ট্রাক ফেরিতে উঠার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে করে দৌলতদিয়া যাত্রী ও চালকদের ভোগান্তি আরো বাড়ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিনে গতকাল ৮ই অক্টোবর সন্ধ্যার আগে দেখা যায়, দৌলতদিয়া ঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে মহাসড়কের বাংলাদেশ হ্যাচারিজ পর্যন্ত অন্তত সাড়ে ৩ কিলোমিটার জুড়ে যাত্রীবাহি বাসের দীর্ঘ সারি। এর মধ্যে অসংখ্য নৈশ কোচ সোমবার রাতে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় সিরিয়ালে আটকে পড়ে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ফেরির নাগাল পায়নি। তবে সিরিয়ালের ফাঁকে ফাঁকে কিছু পন্য বাহি ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান দেখা যায়। কিন্তু কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তা থাকার কথা নয়। এ সময় গুরুত্বপূর্ণ ঘাটটি পরিদর্শনে আসেন রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক দিলশাদ বেগম। তিনি ৬নং ফেরি ঘাটে অবস্থান কালেই ঢাকা মেট্টে ট ১১-৩০২৪ নং একটি বড় ট্রাক ফেরিতে উঠছিল। এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিআইডাব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক আবু আব্দুল্লাহ রনি। বিষয়টি তার নজরে আসলে তিনি ট্রাকটি ফেরিতে উঠতে নিষেধ করে কর্তব্যরত পুলিশকে ট্রাকটি ঘুরিয়ে দিতে নির্দেশ দেন।
এদিকে, গত কয়েক দিনের তীব্র ¯্রােতে ১ ও ২নং ফেরিঘাটে ভাঙনের কবলে পড়ায় স্থানীয়রা শংকিত হয়ে বাড়ীঘর সরিয়ে নেয়ার পর সবকটি ফেরিঘাট নদীতে বিলীন হওয়ার আশংঙ্কায় রয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় প্রশাসন দৌলতদিয়া ঘাটের ভাঙন পরিদর্শন করেন। এ সময় রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম ভাঙনের তীব্রতায় শংঙ্কিত হয়ে বলেন, দৌলতদিয়া ফেরিঘাটগুলো নিরাপদ স্থানে নেয়া দরকার। তিনি আরো বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা কোন কাজে আসছে না।
বিআইডাব্লিউটিসি জানায়, গত এক সপ্তাহ নদীতে তীব্র ¯্রােত থাকার কারণে ফেরি চলাচল চরম ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া একই কারণে লঞ্চ চলাচল কর্তৃপক্ষ গত ৪দিন ধরে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে লঞ্চ চলাচল সম্পুর্ন বন্ধ রেখেন। এ পরিস্থিতিতে নৌরুটের মোট ১৬টি ফেরির মধ্যে বেশীর ভাগ ফেরিই ¯্রােতের বিপরীতে চলাচল করতে পাছে না। কখনো ৩টা আবার কখনো ৭/৮টি ফেরি চলাচল করছে। সেক্ষেত্রেও ¯্রােতের তীব্রতায় ফেরিগুলোকে প্রতি ট্রিপে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশী সময় লাগছে। আবার কখনো যানবাহন পারাপার বন্ধ করে দিয়ে শুধু যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে। এ অবস্থায় সোমবার থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পন্যবাহি ট্রাক পাড় না করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে কর্তৃপক্ষ। তারপরও ঘন্টার পর ঘন্টা দীর্ঘ সিরিয়ালে আটকে আছে যাত্রীবাহি শত শত বাস।
আলাপকালে একাধিক বাস চালক অভিযোগ করেন, নদী পারাপার হতে এসে প্রতিটি বাসের অন্তত ১০/১২ ঘন্টা সিরিয়ালে আটক থাকতে হচ্ছে। যাত্রীদের দূর্ভোগের কথা বিবেচনা করে কর্তৃপক্ষ যেখানে পন্যবাহি ট্রাক পারাপার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেখানে কিছু অসাধু ট্রফিক পুলিশ অনৈতিক সুবিধা নিয়ে পারাপারে ব্যস্থ আছে। এতে যাত্রীদের ভোগান্তি আরো বাড়ছে।
এদিকে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় নদী ভাঙন অব্যাহত থাকায় চরম ভাঙন আতঙ্কে আছে দৌলতদিয়া সবকটি ফেরি ঘাট। সেখানে ভাঙন রোধে কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোড ও বিআইডাব্লিউটিএ। তবে তা তেমন একটা ফলপ্রসু হচ্ছে না বলে অনেকেই জানান।
বিআইডাব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট ব্যাবস্থাপক আবু আব্দুল্লাহ রনি জানান, গুরুত্বপূর্ণ এ নৌরুটে মোট ১৬টি ফেরির মধ্যে তীব্র ¯্রােতের বিপরীতে বর্তমানে মাত্র ৭টি ফেরি চলাচল করতে পারছে। যে ফেরিগুলো চলছে সেগুলোরও প্রতি ট্রিপে কয়েকগুন বেশী সময় লাগছে। এতে করে যানবাহন পারাপার স্বাভাবিক করা যাচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে পন্যবাহি ট্রাক পারাপার আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছে।
দৌলতদিয়া ঘাটে কর্তব্যরত ট্রাফিক ইন্সপেক্টর আবুল হোসেন জানান, কোন পন্যবাহি ট্রাককে ফেরিতে উঠার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। সিরিয়ালের মধ্যে যদি কোন পন্যবাহি ট্রাক থাকে সেটিকে ঘুরিয়ে দেয়া হচ্ছে। এসময় তিনি দাবি করেন, যে ট্রাকটি ফেরিতে উঠার সময় ঘুরিয়ে দেয়া হয়েছে ওই ট্রাকটি প্রশ্নপত্র আনতে ঢাকায় যাচ্ছিল।