॥সোহেল মিয়া॥ হঠাৎ নদীতে পানি বৃদ্ধিতে সৃষ্ট ভাঙনে দিশেহারা অবস্থায় পড়েছে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নের পদ্মা পাড়ের হাজারও পরিবার।
ইতিমধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ওই দু’টি ইউনিয়নের ৪টি গ্রাম আফসার শেখের পাড়া, ধল্লাপাড়া, হাতেম মন্ডলের পাড়া ও লালু মন্ডলের পাড়া। এভাবে নদী পদ্মা পাড়ের মানুষের সবকিছু কেড়ে নিচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তরা এখনও কোন সরকারী সহায়তা পায়নি।
দৌলতদিয়া ১ নং ফেরী ঘাট এলাকা সংলগ্ন পদ্মা নদীর পাড়ে বসবাসকারী পরিবারগুলোকে দেখা যায়, সকলের তাদের ঘর-বাড়ী ভেঙ্গে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। যাদের সামর্থ্য আছে তারা জমির মালিকদের কাছ থেকে বছর চুক্তিতে জমি লীজ নিয়ে বাড়ী-ঘর করে থাকছে। যাদের সেই সামর্থ্য নেই তারা বাঁধের রাস্তাসহ সরকারী জায়গায় ঠাঁই নিচ্ছে। ঘর-বাড়ী ভেঙে অন্য জায়গায় সরিয়ে নিলেও দীর্ঘদিন বসবাস করায় সবারই ভিটা ছেড়ে যেতে কষ্ট হচ্ছে। অনেকে আবার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত না দেখে ভিটা ছাড়তে নারাজ। তেমনই এক নারী দৌলতদিয়া ১ নং ফেরী ঘাট এলাকার বাসিন্দা ফুলমতি বেগম বলেন, বাবা-রে কতদিন এখানে কাটিয়েছি। অনেক স্মৃতি এখানে রয়েছে। তাই এখান থেকে ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে ইচ্ছা করছে না। যতক্ষণ ভিটেটুকু থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত এখানেই বসে থাকবো। তিনি তাদের দুর্দশার কথা সরকার প্রধানকে জানানোর অনুরোধ করেন।
দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মন্ডল বলেন, নদী ভাঙন কবলিত মানুষগুলো দিশেহারা হয়ে পড়েছে। কোয়ায় যাবে, কী করবে-সত্যি তারা বড় অসহায় হয়ে পড়েছে।
নদী ভাঙনের জন্য অবৈধ০ভাবে বালু উত্তোলনকে দায়ী করে রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী বলেন, বিগত ১০ বছরের থেকে এবার পদ্মা নদীর ভাঙনের তীব্রতা বেশী। এ রকম নদী ভাঙন আগে রাজবাড়ীবাসী দেখেনি। এর জন্য পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনই প্রধানত দায়ী। নদী থেকে আর কাউকে অবৈধভাবে বালু তুলতে দেয়া হবে না। এমনকি যাতে বৈধভাবেও কোন বালুমহাল ইজারা দেয়া না হয় সে ব্যাপারে আমি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে কথা বলবো।
জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডকে যত দ্রত সম্ভব ভাঙন রোধে পর্যাপ্ত পরিমাণে বালুভর্তি জিও ব্যাগ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাদের ঘর-বাড়ী নদীতে বিলীন হয়ে গেছে আমরা তাদের একটি তালিকা প্রস্তুত করছি। তালিকার কাজ শেষ হলে তাদেরকে সরকারী সহায়তা প্রদান করা হবে।
রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শফিকুল ইসলাম শেখ বলেন, নদী ভাঙন রোধে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করার জন্য রাজবাড়ী-১ আসনের এমপি ও জেলা প্রশাসক আমাকে বলেছেন। আমাদের শতাধিক শ্রমিক দিন-রাত কাজ করছে।