বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৩৮ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
রাজবাড়ী জেলায় নৌকার প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন পরিচালনায় যুবলীগের কমিটি গোয়ালন্দে মহাসড়কের পাশে বন বিভাগের ৫৪১টি গাছ কেটে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা রাজবাড়ীতে নিরাপদ অভিবাসন ও দক্ষতা উন্নয়ন শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত রাজবাড়ী থিয়েটারের আয়োজনে চার দিনব্যাপী নাট্যোৎসব শুরু রাজবাড়ী কালেক্টরেটের পক্ষ থেকে এডিসি মাহাবুর রহমানকে বিদায় সংবর্ধনা প্রদান রাজবাড়ী জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে এডিসিকে বিদায় সংবর্ধনা পাংশায় অস্ত্র মামলায় গ্রেফতারকৃত কৃষক লীগ নেতা হেনা মুন্সী শ্রীঘরে পাংশায় নিপা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে জনসচেতনতায় র‌্যালী ও আলোচনা সভা পাংশায় ইটভাটার মালিককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা কুয়াশায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে সোয়া তিন ঘন্টা ফেরী চলাচল বন্ধ

আমার বাড়ী আমার খামার

  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৭.৩৫ পিএম
  • ৬৮৯ বার পঠিত

 ড. শিল্পী ভদ্র  ‘শেখ হাসিনার উপহার, একটি বাড়ী একটি খামার, বদলাবে দিন তোমার আমার’-এই শ্লোগানকে সামনে রেখে দারিদ্র নির্মূলে সরকারের কর্মসূচীটির বিস্তার আজ সারা দেশে। ফলে উপকারভোগীদের আয় বৃদ্ধি পেয়ে দারিদ্রমুক্তি ঘটছে। একটি বাড়ী একটি খামার, পারিবারিক খামার বা কৃষিকাজের মাধ্যমে দারিদ্র দূর করতে বাংলাদেশ সরকারের একটি অন্যতম প্রকল্প। এর মূল লক্ষ্য তহবিল সংগ্রহ ও পারিবারিক খামারের মাধ্যমে দারিদ্র নির্মূল ও টেকসই উন্নয়ন। বহুমাত্রিক এই কর্মসূচীর মাধ্যমে সরকার একদিকে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে সুসংগঠিত করছে; অন্যদিকে সঞ্চয়ের উৎসাহ প্রদান ও সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হতে সহায়তা করছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগ ‘একটি বাড়ী একটি খামার’ প্রকল্পের নাম বদলে ‘আমার বাড়ী আমার খামার’ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রায় ও অনুশাসন বিবেচনা করে নতুন নামকরণের প্রস্তাব ২০১৯ সালের ২৫শে মার্চ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় প্রশাসনিক অনুমোদন দিয়েছে। তাই এখন থেকে নতুন নামে পরিচিতি পাবে প্রধানমন্ত্রীর ১০টি বিশেষ উদ্যোগের শীর্ষে থাকা এই বিশেষ উদ্যোগ।
বাংলার কৃষি এবং কৃষক একই সুতোয় গাঁথা। কারণ যে কৃষক ধান ফলান, তিনি বাড়ীর আঙ্গিনায় শাক-সবজির আবাদ করেন; আবার সুযোগ পেলে পুকুরে মাছের চাষও করেন। তিনিই আবার ছাগল, গরু, কবুতর ইত্যাদি পালন করেন। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মধ্যে এগুলো অত্যাবশ্যকীয়। তবে এমন পারিবারিক খামার গড়ার স্বপ্ন সবার থাকলেও পুঁজির অভাবে অনেকেই তা পেরে ওঠেন না। এসব প্রান্তিক মানুষের পাশে দাঁড়াতেই সরকারের এই প্রকল্প আমার বাড়ী আমার খামার। প্রত্যেকে নিজের জমি ব্যবহার করে নিজেরাই যাতে স্বাবলম্বী হতে পারে এবং আর্থিকভাবে যাতে সচ্ছলতা আসে তার জন্য প্রতিটি মানুষের জন্য বাড়ী-ঘর নির্মাণ এবং কোন জমি যেন পতিত না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রেখে এই প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার।
এই প্রকল্পের অধীনে প্রতিটি গ্রামে ৬০ জন দরিদ্র মানুষকে নিয়ে একটি সমিতি গঠন করা হয়। এদের মধ্যে ৪০ জন নারী সদস্য ও ২০ জন পুরুষ সদস্য। প্রত্যেক সমিতির নামে একটি ব্যাংক একাউন্ট বা হিসাব খোলা হয়। প্রত্যেক সদস্য মাসে ২০০ টাকা করে ঐ একাউন্টে জমা দেন। এভাবে দু’বছরে প্রতিটি সমিতির একাউন্টে সদস্যরা জমা দেন ২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। সরকারও সমপরিমাণ টাকা জমা দেয়। এছাড়া প্রত্যেক সমিতি সরকারের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা ঋণ নিতে পারে। অর্থাৎ দু’বছর পর ঋণসহ প্রত্যেক সমিতির তহবিল দাঁড়ায় ৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকা।
উল্লেখ্য, প্রত্যেক সমিতি ৬ মাস পর পর উঠান বৈঠক করে তাদের জমানো তহবিল আয়বর্ধক কোনো কাজে ব্যবহার করবে কি না সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। সমিতির সিদ্ধান্ত অনুমোদনের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠাতে হয়। প্রস্তাব অনুমোদন হলে সমিতি ঋণ গ্রহণ করতে পারে। ঋণের প্রক্রিয়াও অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হয়। অর্থাৎ সমিতির মনোনীত কোন সদস্যের মোবাইলে ঋণের গোপন পিন কোডটি পাঠানো হয়, যা দেখিয়ে তিনি প্রকল্প নির্ধারিত ব্যাংক এজেন্টের কাছ থেকে ঋণের টাকা গ্রহণ করতে পারেন। এর ফলে পুরো প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়।
এই প্রকল্পে দেশের ৭টি বিভাগ, ৬৪টি জেলা, ৪৮৫টি উপজেলা, ৪হাজার ৫০৩ ইউনিয়ন ও ৪০ হাজার ৫২৭টি গ্রাম এবং তৃতীয় সংশোধনীর পর আরো ৬০ হাজার গ্রামকে অন্তর্ভুক্তির উদ্যোগ নেয়া হয় (সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট)। ২০১৬ সালের ২৫শে অক্টোবর এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে এই প্রকল্পের তৃতীয় সংশোধনী আনা হয়; সেই সাথে গঠন করা হয় ‘পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক’।
‘আমার বাড়ী আমার খামার’ প্রকল্পের লক্ষ্য দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ও মানব সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার করে কৃষিভিত্তিক আয়বর্ধক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খামার গড়ে তুলে কৃষি উৎপাদন ও পারিবারিক আয় বৃদ্ধিসহ নারীর ক্ষমতায়ন এবং দারিদ্র মোচন নিশ্চিত করা।
প্রতিটি বাড়িকে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এবং ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত দেশ গড়তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বহুমাত্রিক কর্মসূচী গ্রহণ করেছেন, তার অন্যতম আমার বাড়ী আমার খামার প্রকল্প। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা শত্রুকে মোকাবিলা করে যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছি। এখন আমাদের যে যুদ্ধ সেটা হচ্ছে দারিদ্রের বিরুদ্ধে, বাংলাদেশকে আমরা দারিদ্রমুক্ত করতে চাই, কাজেই আমাদের এখন সব থেকে প্রধান শত্রু হচ্ছে দারিদ্র। এই দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে আমাদেরকে লড়াই করতে হবে, অর্থাৎ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য মন-প্রাণ দিয়ে কাজ করতে হবে’ (সূত্রঃ আমার বাড়ী আমার খামার প্রকল্প-ভিডিও ডকুমেন্টেশন ২০১৪)।
প্রকল্প শুরুর প্রাক্কালে বিদ্যমান দারিদ্রের হার ২৪.৮% থেকে ১৮.৬%-এ নামিয়ে আনা এবং অতি দারিদ্রের হার ২০২০ সালের মধ্যে ৮ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে এই প্রকল্প কাজ করছে। দারিদ্র্য সীমার নীচের এক কোটি পরিবারকে প্রকল্পভুক্ত করে ২০২১ সালের মধ্যে দারিদ্র্যকে শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এসডিজি বা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার প্রধান লক্ষ্য দারিদ্র্য মোচন। অন্যান্য কর্মসূচীর পাশাপাশি আমার বাড়ী আমার খামার প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার সেই লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করছে।
যেহেতু এই প্রকল্পের অধীনে গঠিত সমিতির ৬৭ ভাগ সদস্যই নারী, সেহেতু প্রকল্পটি নারীর ক্ষমতায়নে উল্লেখ্যযোগ্য ভূমিকা রাখবে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রান্তিক পরিবারগুলোর অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষাসহ উন্নয়নের সকল সূচকেই ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
প্রকল্পের সব আর্থিক লেনদেন অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হচ্ছে বলে একদিকে প্রান্তিক মানুষকে আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি সেবার আওতায় আনা যাচ্ছে, অন্যদিকে প্রকল্পের আর্থিক লেনদেনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাও সম্ভব হচ্ছে। আবার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে।
দরিদ্র মানুষের জন্য তহবিল গঠনের এমন উদ্যোগ বিশ্বে এটাই প্রথম। তাই অনেক দেশ ও আন্তর্জাতিক এনজিও এখন বাংলাদেশ সরকারের দারিদ্র্য নির্মূলের এই মডেল গ্রহণে আগ্রহ দেখাচ্ছে।
সব উপকারভোগী প্রকল্পের মাধ্যমে তহবিল গঠন ও ঋণ নিয়ে আয়বর্ধক কাজে বিনিয়োগের সুফল সম্পর্কে আগ্রহী হলে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে, যা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির চিত্র বদলে দিতে অবদান রাখবে বলে আশা করা যায় -পিআইডি প্রবন্ধ।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..

Leave a Reply

Your email address will not be published.

© All rights reserved  2019 Rajbarisangbad
Theme Developed BY ThemesBazar.Com