রাজবাড়ী শহরের ডাঃ আবুল হোসেন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ এবিএম মঞ্জুরুল আলম দুলালের বিরুদ্ধে অনিয়ন-দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড।
কলেজের ৪৬জন শিক্ষকের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ৬ই সেপ্টেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকার কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর আবু তালেব মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন কর্তৃক স্বাক্ষরিত পত্রে রাজবাড়ী জেলা শিক্ষা অফিসারকে এই তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘ডাঃ আবুল হোসেন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ এবিএম মঞ্জুরুল আলম দুলালের ১ কোটি ২২ লক্ষ টাকার বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতির বিষয়ে তদন্তের জন্য জেলা শিক্ষা অফিসার, রাজবাড়ীকে মনোনয়ন দেয়া হলো।
তাকে উক্ত অভিযোগ তদন্তের লক্ষে প্রতিষ্ঠানটি সরেজমিনে পরিদর্শন পূর্বক ১৫ কর্ম দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য(স্বাক্ষরকারীর দপ্তরে) অনুরোধ করা হলো।’
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২রা ফেব্রুয়ারী ডাঃ আবুল হোসেন কলেজের ৪৬ জন শিক্ষক সাবেক অধ্যক্ষ এবিএম মঞ্জুরুল আলম দুলালের বিরুদ্ধে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর ১ কোটি ২২ লক্ষ টাকা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ করেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, এবিএম মঞ্জুরুল আলম দুলাল স্বেচ্ছাচারীরা, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কলেজের তহবিল থেকে উল্লেখিত পরিমাণ অর্থ লোপাট করেছেন। এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে তহবিল শূন্য এবং অভিযোগকারী শিক্ষকরা প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। কলেজের এমপিওভুক্ত, নন-এমপিও শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারী ৭৮ জন। কলেজ তহবিল থেকে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ৬মাস যাবৎ বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। প্রতিষ্ঠানে বেতন বিহীন ৪৫জন শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। তারা বেতন বিহীন অবস্থায় মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। সাবেক অধ্যক্ষ এবিএম মঞ্জুরুল আলম দুলালের কারণে শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছে। এমতাবস্থায় সুষ্ঠু অডিটের মাধ্যমে কলেজের সকল অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত পূর্বক আত্মসাতকৃত অর্থ কলেজ ফান্ডে জমা হওয়া প্রয়োজন।
শিক্ষকদের ১২ দফা অভিযোগের মধ্যে রয়েছে ঃ ২০১৯ সালে কলেজের ছাত্র হোস্টেল নির্মাণে ১ কোটি ১৮ লক্ষ টাকার মধ্যে আনুমানিক ৩০ লক্ষ অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাত, অধ্যক্ষ বিভিন্ন সময় যাতায়াত বাবদ নিয়ম বহির্ভূতভাবে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত, কলেজের মহিলা হোস্টেলের টিনের ঘর নির্মাণের সময় দেড় লক্ষ টাকা আত্মসাত, কলেজের নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের কাছ থেকে উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের কথা বলে ৩০ লক্ষ টাকা আদায় যার কোন হিসাব পাওয়া যায় নাই, বই বিতরণ ও ক্রয় বাবদ আড়াই লক্ষ টাকার দুর্নীতি, ক্রীড়া খাতে ৩ লক্ষ টাকার দুর্নীতি, কলেজের ২১ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে ১৫ লক্ষ টাকা খরচের মধ্যে আনুমানিক ৫লক্ষ টাকার দুর্নীতি, প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ আবুল হোসেনের পুত্র ডাঃ নাজমুল হোসেন কর্তৃক প্রদত্ত অডিটোরিয়ামের সাউন্ড সিস্টেম ক্রয়ের জন্য দেয়া ২০০ পাউন্ড কলেজ খাতে জমা না দিয়ে আত্মসাত, প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ আবুল হোসেনের উপর প্রভাব খাটিয়ে ছাত্রী হোস্টেলের জন্য ওয়াদাকৃত জমি সুকৌশলে নিজের নামে লিখে নিয়ে বিক্রি করে ৪০ লক্ষ টাকা আত্মসাত, কলেজের বিভিন্ন সরঞ্জাম (ল্যাপটপ, মোবাইল, কম্পিউটার, এসি, আসবাবপত্র, ২৪ ইঞ্চি রঙিন টেলিভিশন) বাড়ী নিয়ে গিয়ে আর ফেরত না দেয়া, অধ্যক্ষের ২৩ বছরের চাকরীকালীন সময়ে মাত্র ২/৩ বার অভ্যন্তরীণ অডিট করানো, তাতেই নানা আর্থিক অনিয়ম, রশিদ বইতে টাকার অংকে ঘষামাজার প্রমাণ পাওয়া গেছে ৬ লক্ষ টাকার-সুষ্ঠু অডিট হলে আত্মসাতকৃত টাকার পরিমাণ আরো বাড়বে, গত ০৮/০৭/২০২০ ইং তারিখে অবসরকালীন দায়িত্ব হস্তান্তরের সময় ব্যাংক হিসাব, ক্যাশ রেজিস্ট্রার, স্টক রেজিস্ট্রার, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের বুক রেজিস্ট্রার, বিল-ভাউচারসহ কোন কিছুই বুঝিয়ে না দেয়া ইত্যাদি।
এ ব্যাপারে কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ এবিএম মঞ্জুরুল আলম দুলাল বলেন, আমি কোন আর্থিক অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে জড়িত নই। দায়িত্বে থাকাকালে কলেজে যে সকল ব্যয় করা হয়েছে তা কলেজের গভর্নিং বডি’র অনুমোদনে করা হয়েছে। সুষ্ঠুভাবে স্বচ্ছতার সাথে তার অডিটও সম্পন্ন হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা আদৌ সত্য নয়।