॥সুশীল দাস॥ রাজবাড়ী সদর উপজেলার বসন্তপুর ইউনিয়নের কোলা বাজার এলাকার উদয়পুর বালিকা আইডিয়াল একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতার বিরুদ্ধে গোপনে মৃত ব্যক্তির জমি ভুয়া দাতা সাজিয়ে স্কুলের নামে ৪৩ শতাংশ জমি লিখে নিয়ে সেই ভূয়া কাগজপত্র দেখিয়ে এমপিওভুক্তির চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে জমির প্রকৃত মালিক আপন ১২ সহোদর গতকাল ২৩শে জুন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত আবেদন করে ‘এমপিওভুক্তির কার্যক্রম’ স্থগিত রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন। এছাড়াও তারা ভূয়া দলিল তৈরী করে স্কুলের নামে জমির মালিকানা দাবীর বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
অভিযোগ সূত্রে প্রকাশ, বসন্তপুর ইউনিয়নের উদয়পুর গ্রামের নূরু মিয়া পাটোয়ারী ২০০০ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারী মৃত্যুবরণ করেন। তার আগেই তিনি অসুস্থ থাকা অবস্থায় গত ১৮/১০/১৯৯৮ ইং তারিখে রাজবাড়ী সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের ৬৬৯৯ নং হেবা দলিলমূলে বসত বাড়ী ও বাড়ী সংলগ্ন ২৭ শতাংশ জমি (এস.এ ৮৬৫ নং যা বি.এস ৮৪৯ নং খতিয়ানের আর.এস ৩০৮ নং যা বি.এস ৩৭৯ নং দাগের ১৭ শতাংশ এবং আর.এস ৩০৮ নং যা বি.এস ৩৮৭ নং দাগে ১০ শতাংশ) নিজের ১০ ছেলের (আনোয়ার উল্লাহ পাটোয়ারী, মমিন পাটোয়ারী, আঃ রশিদ পাটোয়ারী, মান্নান পাটোয়ারী, ছানু পাটোয়ারী, হাচান পাটোয়ারী, আমিন উল্লাহ পাটোয়ারী, রহিম পাটোয়ারী, হানু পাটোয়ারী, ইয়াছিন পাটোয়ারী) নামে লিখে দেন। তারও আগে ১৫/০৯/১৯৯২ইং তারিখে ৫৬১৭ নং হেবা দলিলমূলে ১৯ শতাংশ জমি অপর দুই ছেলে জিয়াউর রহমান পাটোয়ারী ও জাহাঙ্গীর পাটোয়ারীর নামে লিখে দেন। পরবর্তীতে ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত উদয়পুর বালিকা আইডিয়াল একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা বিএনপি নেতা আবুল হোসেন গাজী সুকৌশলে মৃত নূরু মিয়া পাটোয়ারীকে দাতা সাজিয়ে ২৪/০৩/২০০২ইং তারিখে ২১০০ নং অর্পণনামা মূলে ২৭ শতাংশের মধ্যকার ২৩, ১৯ শতাংশের মধ্যকার ১২ ও আরেকটি ১টি দাগের (আর.এস ৩০৭) ১৬ শতাংশের মধ্যে ৮শতাংশসহ মোট ৪৩ শতাংশ জমি স্কুলের নামে লিখে নেন। দীর্ঘদিন বিষয়টি গোপন থাকার পর সম্প্রতি স্কুল কর্তৃপক্ষ মৃত নূরু মিয়ার পাটোয়ারীর ওয়ারিশদের সত্ত্বদখলীয় বসত বাড়ী ও আশপাশের জমি পেঁচিয়ে স্কুলের পাকা সীমানা দেয়াল নির্মাণের উদ্যোগ নিলে নূরু মিয়ার ওয়ারিশরা বাঁধা দেন। পরবর্তীতে তারা খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পারেন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সুকৌশলে গোপনে মৃত নূরু মিয়া পাটোয়ারীকে দাতা সাজিয়ে স্কুলের নামে জমি লিখে নিয়েছে এবং সেই ভূয়া কাগজপত্র দেখিয়ে স্কুলটিকে এমপিওভুক্ত করার আবেদন করে প্রক্রিয়া অনেক এগিয়ে নিয়ে গেছে। তখন মৃত নূরু মিয়া পাটোয়ারীরা সন্তানরা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত আবেদন করে ‘এমপিওভুক্তির কার্যক্রম’ স্থগিত রাখার অনুরোধ জানান। এছাড়াও আবেদনের অনুলিপি রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর প্রদান করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়।
অভিযোগকারী মৃত নূরু মিয়া পাটোয়ারীর ছেলেরা বলেন, তাদের পিতা ২০০০ সালে মারা গেলেও উদয়পুর বালিকা আইডিয়াল একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা বিএনপি নেতা আবুল হোসেন গাজী ২০০২ সালে বিএনপির ক্ষমতায় থাকার প্রভাব কাজে লাগিয়ে তাদের মৃত পিতাকে দাতা সাজিয়ে ভূয়া দলিল করে স্কুলের নামে ৪৩ শতাংশ জমি লিখে নেয়। সম্প্রতি তারা বিষয়টি জানতে পারেন। এছাড়া স্কুলের নামে ওই জমি দেখিয়ে এমপিওভুক্তির আবেদন করা হয়েছে। তাই তারা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর ‘এমপিওভুক্তির কার্যক্রম স্থগিত’ রাখার আবেদন করেছেন। জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের আবেদনের অনুলিপি প্রদান করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আবুল হোসেন গাজী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নূরু মিয়া পাটোয়ারী স্কুলের নামে জমি লিখে দেয়ার পরে মারা গেছেন। সেই জায়গায় স্কুলের বিল্ডিং হয়েছে। তাদের দাবী ভিত্তিহীন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাসলিমা খাতুন বলেন, সীমানা দেয়ালের কাজ সম্পন্ন করার আগে সঠিকভাবে জায়গা চিহ্নিত করার জন্য ইউপি চেয়ারম্যানের সহযোগিতা চেয়েছি। তিনি দু’পক্ষকে নিয়ে বসার জন্য একটা তারিখ নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
বসন্তপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মীর্জা বদিউজ্জামান বাবু বলেন, দু’পক্ষই বিষয়টি নিয়ে আমার কাছে এসেছে। আগামী শনিবার সকালে দু’পক্ষকে নিয়ে বসার সময় নির্ধারণ করে দিয়েছি। দু’পক্ষের কাগজপত্র দেখে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।