॥স্টাফ রিপোর্টার॥ সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও অব্যবস্থাপনায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে রাজবাড়ীর বিসিক শিল্প নগরী। অবকাঠামোগত সুবিধা এবং সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় লোকসানের মুখে বন্ধ হয়ে গেছে বহু শিল্প প্রতিষ্ঠান।
অপরদিকে, দীর্ঘদিন পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা না করায় বন্ধ থাকা এসব প্রতিষ্ঠান ভূতুরে বাড়িতে পরিণত হয়েছে। সেই সাথে পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা ও ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধে পরিবেশ দূষিত হওয়ার পাশাপাশি বর্ষা মৌসুমে চলাচলের অনুপ্রযোগি হয়ে পড়ে এ শিল্প নগরীতে।
তবে সকল অনিয়ম ও সংকট কাটিয়ে রাজবাড়ী শিল্প নগরী একটি গতিশীল শিল্প নগরী হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়াসের কথা জানিয়েছেন সদ্য যোগদানকৃত বিসিক কর্মকর্তা।
১৯৬৪ সালে রাজবাড়ী শহরের পুলিশ লাইন্সের পাশে রামকান্তপুর এলাকায় ১৫.২৮ একর জমি অধিগ্রহণ করে গড়ে তোলা হয় বিসিক শিল্প নগরী। বিদ্যুৎসহ অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা ও সঠিক তদারকি এবং সরকারী পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ৫৫ বছরেও এখানে গড়ে ওঠেনি উল্লেখযোগ্য কোনো শিল্প কারখানা।
বিসিকের তথ্য অনুযায়ী এখানে প্লট রয়েছে ৭৭টি। আর বরাদ্দকৃত শিল্প ইউনিটের সংখ্যা ৫২টি। বরাদ্দকৃত এই ৫২টি ইউনিটির মধ্যে বর্তমানে চালু রয়েছে ৪১টি শিল্প প্রতিষ্ঠান।
তবে বাস্তবে রয়েছে এর ভিন্ন চিত্র। হাতে গোনা ১২ থেকে ১৩টি শিল্প প্রতিষ্ঠান চালু থাকলেও সবই রয়েছে বন্ধ। আবার এই চালু শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যেও অর্ধেকই রয়েছে ভগ্ন দশায়।
বিসিক শিল্প নগরীর ব্যবসায়ী তৌহিদুল সালাম বলেন, ১৯৮০ সালে আমার বাবা চাকুরী ছেড়ে একজন উদ্যোক্তা হওয়ার আশায় এই বিসিক শিল্প নগরীতে পপুলার অয়েল মিল নামে সরিষার তেলের একটি ফ্যাক্টারী করেন। ওই সময়ে সারাদেশের মানুষ রান্নায় সরিষার তেল ব্যবহার করতো। শুরুটা ভালও ছিল। কিন্তু সরকারের হটকারী সিদ্ধান্তে বিদেশ থেকে পামওয়েল ও সয়াবিন তেল আমদানী শুরু হয়। ফলে দেশীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্থ হয়। আমরাও প্রচুর টাকা দেনা হয়ে যাই। আমরা জমিজমা বিক্রি করে সেই দেনা পরিশোধ করি। এরপর বিসিকের কোন সহযোগিতা ও ব্যাংকের সহযোগিতা না পাওয়ায় আমরা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারিনি।
রাজবাড়ী বিসিক শিল্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী বেনজীর আহম্মেদ বলেন, বর্তমানে এ বিসিক নগরীতে ৯০ ভাগ শিল্প প্রতিষ্ঠানই বন্ধ রয়েছে। এর কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন এখানে রাষ্ট্রীয় কোন পৃষ্ঠপোষকতা নেই। বিসিকের কোন ব্যবসায়ী ব্যাংক লোন সুবিধা পান না। এছাড়া বিসিক শিল্প সহায়তা কেন্দ্রও আমাদের কোন সহযোগিতা করেন না। এরপর রয়েছে বিদ্যুতের সমস্যা। আমাদের দাবী ছিল বিসিকের জন্য আলাদা ফিডার করা হোক। কিন্তু সেটি না হওয়ায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে উৎপাদন খরচও বেড়ে যায়। এসব অব্যবস্থাপনার মধ্যে থাকতে থাকতে আমাদের উৎপাদিত পণ্যের উপযুক্ত মূল্য আমরা পাই না। যার কারণে এখানকার অধিকাংশ শিল্প প্রতিষ্ঠান লোকসানের মুখে বন্ধ হয়ে গেছে।
রাজবাড়ী বিসিকের সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক এসএম এবাদুল হক বলেন, আমি এখানে সদ্য যোগদান করেছি। এ বিসিক শিল্পনগরীতে আগে নিয়ম অনিয়ম থাকলেও বর্তমানে সকল অনিয়ম কাটিয়ে আমরা রাজবাড়ী শিল্প নগরীকে একটা গতিশীল শিল্প নগরী হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়াস চালাচ্ছি এবং নানান প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। খুব শীঘ্রই সেটা বাস্তবায়ন হবে।
পদ্মা পাড়ের জেলা রাজবাড়ীতে এই শিল্প নগরীকে পুরোপুরি কাজে লাগানো গেলে শুধু কর্মসংস্থানই সৃষ্টি হবে না পুরো জেলায় অর্থনীতিতে গতি আসবে এমন আশা সবার। এ জন্য ছোটবড় সকল শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকদের ব্যাংক লোন সুবিধা, নতুন উদ্যোক্তা তৈরী ও সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা বাড়াতে হবে বলে মনে করেন জেলাবাসী।