॥রফিকুল ইসলাম॥ রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন স্থানে বিজেএমসির ২০টি পাট ক্রয় কেন্দ্রের নিকট কৃষক ও ব্যবসায়ীদের প্রায় ২০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে।
গত কয়েক বছর যাবৎ তারা সরকারী পাট ক্রয় কেন্দ্রগুলোর নিকট থেকে পাওনা টাকা পাচ্ছে না। ফলে কৃষক ও পাট ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছে। পাট ব্যবসায়ীদের অধিকাংশই অর্থাভাবে মানবেতন জীবন-যাপন করছে।
পাট ব্যবসায়ীরা জানান, অর্থাভাবে তাদের ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়াও ব্যাহত হচ্ছে। কবে নাগাদ পাওনা টাকা পাওয়া যাবে তাও কেউ বলতে পারছে না। এ ব্যাপারে পাট মন্ত্রীর নিকট লিখিত দরখাস্ত করেও কোন কাজ হচ্ছে না।
জানা গেছে, রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ, খানখানাপুর, কোলার হাট, বহরপুর, জামালপুর, সোনাপুর, মাছবাড়ী, কালুখালী ও পাংশায় বিজেএমসির সরকারী ক্রয় কেন্দ্রে পাট ক্রয় করা হয়। গত বছর বাকীতে পাট ক্রয় করার পর চলতি বছর সরকারী অনেক ক্রয় কেন্দ্র এখনও চালু হয়নি। ফলে পাট ব্যবসায়ী ও কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে।
ফরিদপুর অঞ্চলের মূখ্য পাট পরিদর্শক জিয়ারত আলী জানান, চলতি বছর রাজবাড়ী জেলায় ১৬টি পাট ক্রয় কেন্দ্র চালু হয়েছে। বিভিন্ন পাট ক্রয় কেন্দ্রে বর্তমানে ২০ কোটি টাকার মতো পাওনা রয়েছে। পাট ব্যবসার জন্য প্রসিদ্ধ খানখানাপুরের প্লাটিনাম জুবিলী জুট মিলের ক্রয় কেন্দ্রটি গত ১০ই অক্টোবর চালু হয়। এর পার্সেজার শহিদুল ইসলাম জানান, এ পর্যন্ত মাত্র ২৫০ মণ পাট ক্রয় করা হয়েছে। সরকারীভাবে কোন টাকা না পাওয়ায় বকেয়া রয়েছে ৫ লক্ষ টাকা।
ইউএমসি জুট মিলের পার্সেজার শফিকুল ইসলাম জানান, গত বছরের বকেয়া রয়েছে ৭ লক্ষ ৮২ হাজার টাকা। চলতি বছর ২২শত মণ পাট ক্রয় করে বকেয়া রয়েছে ৪২ লক্ষ টাকা। বাজারে প্রচুর পাট থাকার সত্ত্বেও ব্যবসায়ীরা সরকারী পাট ক্রয় কেন্দ্রের নিকট পাট বিক্রি করতে অনীহা প্রকাশ করছে।
সরকারীভাবে প্রতি মণ তোশা(ক্রস) পাট ১৮৯০ টাকা দরে ক্রয় করা হলেও ক্রয় কেন্দ্রে নগদ টাকা না থাকায় পার্সেজাররা শত চেষ্টা করেও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী পাট ক্রয় করতে ব্যর্থ হচ্ছে।
কোলার হাটের লতিফ বাওয়ালী জুট মিলের পার্সেজার রফিকুল ইসলাম জানান, সরকারী পাট ক্রয় কেন্দ্রের নিকট অর্ধ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। গত ৩ মাস যাবৎ তাদের বেতনও বন্ধ রয়েছে। গুল আহমেদ জুট মিলের পার্সেজার মাজহারুল ইসলাম জানান, ২০১৬ ও ২০১৮ সালের ৪ কোটি ৪১ লক্ষ টাকা বকেয়া রয়েছে। চলতি বছর ১ কোটি ২৬ লক্ষ টাকার পাট ক্রয় করা হলেও মাত্র ১৫ লক্ষ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। প্রতি দিনই ব্যবসায়ী ও কৃষকরা টাকার জন্য ধর্না দিচ্ছে।
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ ফজলুর রহমান জানান, চলতি বছর জেলায় ৪৭ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। জেলায় কৃষকদের আয়ের প্রধান উৎসই পাট। রাজবাড়ী জেলার পাট খুবই উন্নতমানের।
সরকারী সংস্থা বিজেএমসি (বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন)’র চেয়ারম্যান শাহ মোঃ নাছিম সম্প্রতি রাজবাড়ী জেলার পাট ক্রয় কেন্দ্রগুলো পরিদর্শনকালে ব্যবসায়ীরা টাকা পরিশোধের জন্য আবেদন করলেও এখনো টাকা বরাদ্দের কোন সংবাদ পাওয়া যায়নি।