1॥চঞ্চল সরদার॥ রাজবাড়ী জেলা ট্রাক-কভার্ড ভ্যান ড্রাইভার্স ইউনিয়ন(রেজিঃ নং-২) নামে পরিবহন শ্রমিকদের নতুন একটি সংগঠন আত্মপ্রকাশ করেছে।
গতকাল ১০ই অক্টোবর বিকালে রাজবাড়ীর শ্রীপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে সংগঠনের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন সাবেক নৌ-পরিবহন মন্ত্রী ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি মোঃ শাজাহান খান, এমপি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডঃ ইমদাদুল হক বিশ্বাস, জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক এস.এম নওয়াব আলী এবং রাজবাড়ী জেলা ট্রাক কভার্ড ভ্যান ড্রাইভার্স ইউনিয়নের উপদেষ্টা ও জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মোঃ আব্দুল কুদ্দুস খান।
রাজবাড়ী জেলা ট্রাক-কভার্ড ভ্যান ড্রাইভার্স ইউনিয়নের সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক ইব্রাহীম প্রামানিকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন মনির, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হেদায়েত আলী সোহরাব, সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রাকিবুল হাসান পিয়াল, জেলা ট্রাক-কভার্ড ভ্যান ড্রাইভার্স ইউনিয়নের উপদেষ্টা ও জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আজগর আলী বিশ্বাস প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি ও সাবেক নৌ-পরিবহন মন্ত্রী মোঃ শাজাহান খান এমপি বলেন, ইউনিয়ন আমাদের ঐক্যবদ্ধ শক্তি। ঐক্যবদ্ধ না থাকলে আমাদের শক্তি ক্ষয় পাবে। আর শক্তি যদি না থাকে তাহলে শ্রমিকরা হয়রানীর শিকার হবে। তাই আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমরা যারা শ্রমিক তারা এক পতাকাতলে থাকবো। আমরা এক কাতারে আছি, স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির সাথে আছি। রাজাকার, আলবদর, স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির সাথে নাই। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আমাদের অনেক শ্রমিক শহীদ হয়েছেন। আমরা জাতির পিতার ডাকে যুদ্ধ করেছিলাম, দেশকে স্বাধীন করেছিলাম। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর শ্রমিকরা নানাভাবে হয়রানীর শিকার হয়েছে। যে সরকারই এসেছে তারাই হয়রানী করেছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সড়ক পরিবহন শ্রমিকদের প্রতি দরদ দেখিয়েছেন। তিনি পরিবহন খাতের অনেক উন্নয়ন করেছেন, যা অন্য কোন সরকারের আমলে হয় নাই। ট্রাকের ড্রাইভার-হেলপাররা অনেক দূরে গাড়ী নিয়ে যায়। কিন্তু তাদের কোন বিশ্রামের জায়গা নেই, ঘুমানোর জায়গা নেই। তাই হাইওয়েতে পর্যাপ্ত ট্রাক টার্মিনাল করতে হবে। শুধু যানবাহন চালকদের দোষ না দিয়ে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য যারা প্রকৃত দায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এবারের আইনে সেই বিষয়টা আছে। যদি কোন সরকারী কর্মকর্তার কারণে সড়কের কোন ক্ষতি হয় এবং সে জন্য দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। শেখ হাসিনার সরকারের আমলে দেশের উন্নতি হচ্ছে, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এখন আর গরীব দেশ নয়। বর্তমানে কোন খাদ্য ঘাটতি নেই। আমরা এখন খাদ্য রপ্তানীও করছি। এটা শেখ হাসিনার জন্যই সম্ভব হয়েছে। বিএনপির সময়ে বিদ্যুৎ-সারের জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে। কিন্তু এই সরকারের আমলে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। কৃষকরা সময়মতো সার পাচ্ছে। বিশ্ব ব্যাংক দুর্নীতির কথা বলে পদ্মা সেতুর জন্য টাকা দিলো না। পরে কানাডার আদালতে প্রমাণিত হলো সেখানে কোন দুর্নীতি হয় নাই। আজ আমাদের নিজেদের টাকায়ই পদ্মা সেতু হচ্ছে। ইতিমধ্যে সেতুর ৭০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আরেকটি পদ্মা সেতুর ঘোষণা দিয়েছেন। সেটা হবে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া থেকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া পর্যন্ত। আজকে আমাদের স্বাস্থ্য সেবাও অনেকদূর নিয়ে গেছেন শেখ হাসিনা। আমাদের মাথাপিছু আয় বাড়ছে। অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। এমন কোন জায়গা নাই যেখানে শেখ হাসিনা উন্নয়ন করেননি।
শাজাহান খান আরও বলেন, দুর্ঘটনা নানা কারণে ঘটে থাকে। কিন্তু সব দায়-দায়িত্ব পড়ে একজন ড্রাইভারের উপর। সে জন্য আমি আপনাদের প্রতি আহ্বান জানাবো খুব সাবধানে গাড়ী চালাবেন। আপনাদের কারণে সড়কে যেন দুর্ঘটনা না ঘটে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আমরা সরকারকে বলেছি দুর্ঘটনা ঘটলে তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা বের করুন। যে প্রকৃত দায়ী তার বিচার করুন। ড্রাইভার দায়ী থাকলে বিচার করুন, পথচারী হলে তারও বিচার করুন। রাজীব নামে এক যুবক গাড়ীতে যাচ্ছিল। তার হাত ছিল বাইরে। হাত বাইরে থাকার দুই গাড়ীর ক্রস করার সময় তার হাত ছুটে যায়। পরে সে মারা যায়। সেটা নিয়ে আমাদের কতো সামলোচনা। আমি শ্রমিকদের নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছি, যতদিন বেঁচে থাকবো নিয়েই রাজনীতি করবো। তাদের পক্ষে কথা বলবো।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী বলেন, বাসের ড্রাইভার-হেলপারের যে অধিকার আছে ট্রাকের ড্রাইভার-হেলপারদেরও সেই অধিকার দিতে হবে। বিএনপির জ্বালাও-পোড়াও থেকে শ্রমিকরাই আমাদেরকে রক্ষা করেছিল। আমাদের রাজনীতি হচ্ছে শান্তির রাজনীতি। আমরা যারা আওয়ামী লীগ করি, শেখ হাসিনার সৈনিক-তাদের রাজনীতি হলো সাধারণ মানুষের পাশে থেকে সেবা করা। বিএনপির রাজনীতি হলো মানুষ হত্যার রাজনীতি। আমরা সেই রাজনীতি করি না। আমরা মানুষকে কাছে টেনে নিয়ে আপন করে তার সমস্যার সমাধান করে দেয়ার চেষ্টা করি। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র এখনো চলছে। তাকে মেরে ফেলার চেষ্টাও আছে। আমাদের ভিতরে যদি ঐক্য থাকে তাহলে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে পারি। যারা এদেশে বাস করে পাকিস্তানের স্বপ্ন দেখে তাদের রুখতে পারলে দেশ আরো এগিয়ে যাবে। সবাই মিলে কাজ করলে আপনাদের এই সংগঠন অনেক শক্তিশালী হবে।