॥শেখ মামুন॥ রাজবাড়ী সদর উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের কাউরিয়া স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষকদের স্বেচ্ছাচারীতায় শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।
জানা গেছে, ১৯৮৪ সালে প্রত্যন্ত এলাকায় প্রাথমিক স্তরের এই মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে মাদরাসাটিতে ১১০জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। কাগজে-কলমে শিক্ষকের সংখ্যা ৫জন হলেও বাস্তবে ঠিকমতো পাঠদান করেন মাত্র ২জন।
তারা হলেন ঃ মাদরাসার প্রধান শিক্ষক মোঃ মুন্নাফ চৌধুরী এবং সহকারী শিক্ষক জিয়া রহমান। অপর ৩জন সহকারী শিক্ষকের মধ্যে মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি খলিলুর রহমানের দুই মেয়ে রোকেয়া খাতুন ও জোহরা খাতুন মাদরাসায় আসেই না। এমপিওভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় দীর্ঘদিনের ব্যবধানে একবার এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে আবার চলে যায়। অপর সহকারী শিক্ষক মাওলানা লুৎফর রহমান ব্যস্ত থাকেন তার রাজবাড়ী শহরের বড়পুলস্থ একটি ক্লিনিকের অংশীদারী ব্যবসা নিয়ে। দীর্ঘদিনেও মাদরাসাটি এমপিওভুক্ত না হলেও ১০ বছর আগে প্রধান শিক্ষক মোঃ মুন্নাফ চৌধুরী এবং মাওলানা লুৎফর রহমান শিক্ষক হিসেবে এমপিওভুক্ত হয়েছেন। ৫জন শিক্ষকের স্থলে মাত্র ২জন শিক্ষক ৫টি শ্রেণীর শতাধিক শিক্ষার্থীকে কীভাবে পাঠদান করেন তা সহজেই বোঝা যায়!
সম্প্রতি একাধিক দিন মাদরাসার ক্লাস চলাকালে সরেজমিনে গিয়ে মাদরাসার প্রধান শিক্ষক মোঃ মুন্নাফ চৌধুরী এবং সহকারী শিক্ষক জিয়া রহমানকেই পাওয়া যায়। মাদরাসার একমাত্র টিনশেড ঘরের ৩টি কক্ষের মধ্যে শিক্ষকরা ১টি কক্ষকে তাদের অফিস হিসেবে ব্যবহার করেন। অপর ২টি কক্ষের মধ্যে ছোট কক্ষটিতে ১টি শ্রেণীর ক্লাস এবং অপেক্ষাকৃত বড় কক্ষটিতে অন্যান্য শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীরা পাঠগ্রহণ করে। দেখে বোঝাই যায় না যে কে কোন ক্লাসের শিক্ষার্থী। তাদের কোন সুযোগ-সুবিধাই নেই।
শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বললে তারা জানায়, রোকেয়া খাতুন ও জোহরা খাতুন কখনোই তাদের ক্লাস নেয় না। তারা মাদরাসায়ই আসে না। মাওলানা লুৎফর রহমান মাঝে-মধ্যে মোটর সাইকেলে করে এসে কিছুক্ষণ পরই আবার চলে যায়।
শিক্ষার্থীদের অভিভাবকগণ এ ব্যাপারে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, নিরুপায় হয়েই তারা তাদের সন্তানদের এই মাদরাসায় রেখেছেন। কারণ প্রত্যন্ত এই এলাকার আশপাশে আর কোন প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। শিক্ষকদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও স্বেচ্ছাচারীতার জন্য শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।
মাদরাসায় ঠিকমতো না যাওয়া ও পাঠদান না করার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী শিক্ষক মাওলানা লুৎফর রহমান দাবী করেন, তিনি নিয়মিতই মাদরাসায় আসেন এবং পাঠদান করেন। তবে মাদরাসার শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে তার এই দাবীর কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি। এছাড়া তিনি নিয়মিত অনুপস্থিত থাকা অপর দুই সহকারী শিক্ষক রোকেয়া খাতুন ও জোহরা খাতুন সম্পর্কে কোন মন্তব্য করতে চাননি।
মাদরাসার প্রধান শিক্ষক মোঃ মুন্নাফ চৌধুরী বলেন, সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বিগত বছরগুলোতে এবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষার ফলাফল ভালো। যে দু’জন মাদরাসায় আসেন না তাদের কর্মকান্ডে তিনি সন্তুষ্ট নন। অনিয়মিত অপর শিক্ষকের ব্যাপারেও তিনি একই ধরনের মনোভাব প্রকাশ করেন।
সরেজমিনে মাদরাসাটি পরিদর্শনকালে মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোঃ খলিলুর রহমানের সাথে কথা বলার জন্য একাধিকবার তার মোবাইল ফোনে ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
ওই সময় প্রধান শিক্ষক বলেন, সভাপতির বাড়ী মাদরাসার পাশেই। তিনি মাদরাসায় এলে প্রতিবেদকের আগমন ও তার সাথে কথা বলার চেষ্টার কথাটি বলবেন। পরে প্রধান শিক্ষক জানান, সভাপতি বলেছেন-মাদরাসার ব্যাপারে তিনি কোন সাংবাদিকের সাথে কথা বলবেন না। সে যা পারে তা করুক।
প্রায় ৩ যুগ আগে প্রতিষ্ঠিত মাদরাসাটিতে সরকারের আনুকূল্য ও পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী থাকলেও শুধুমাত্র সভাপতির স্বজনপ্রীতি, ঔদ্ধত্য, তার দুই শিক্ষিকা মেয়ের স্বেচ্ছাচারীতা ও অব্যবস্থাপনার জন্য মাদরাসাটির ভবিষ্যৎ আজ অনিশ্চয়তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অভিভাবকগণসহ স্থানীয় জনগণ মাদরাসাটিকে রক্ষায় জরুরীভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।