বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:১৮ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
রাজবাড়ী জেলায় নৌকার প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন পরিচালনায় যুবলীগের কমিটি গোয়ালন্দে মহাসড়কের পাশে বন বিভাগের ৫৪১টি গাছ কেটে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা রাজবাড়ীতে নিরাপদ অভিবাসন ও দক্ষতা উন্নয়ন শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত রাজবাড়ী থিয়েটারের আয়োজনে চার দিনব্যাপী নাট্যোৎসব শুরু রাজবাড়ী কালেক্টরেটের পক্ষ থেকে এডিসি মাহাবুর রহমানকে বিদায় সংবর্ধনা প্রদান রাজবাড়ী জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে এডিসিকে বিদায় সংবর্ধনা পাংশায় অস্ত্র মামলায় গ্রেফতারকৃত কৃষক লীগ নেতা হেনা মুন্সী শ্রীঘরে পাংশায় নিপা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে জনসচেতনতায় র‌্যালী ও আলোচনা সভা পাংশায় ইটভাটার মালিককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা কুয়াশায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে সোয়া তিন ঘন্টা ফেরী চলাচল বন্ধ

রাজবাড়ীর খানগঞ্জে ফসলি জমি কেটে খাল খননের তিন বছরেও ক্ষতিপূরণ পাননি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা!

  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২৪ জুন, ২০২১, ১২.২৭ এএম
  • ২৬৭ বার পঠিত

॥শিহাবুর রহমান॥ বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানগঞ্জ ইউনিয়নের বেলগাছি ইনটেক হড়াই নদী খনন প্রকল্পে সরকারী খাস জমি বাদ রেখে কোন প্রকার নোটিশ বা জমি অধিগ্রহণ না করে ব্যক্তি মালিকানাধীন ফসলি জমি কেটে খাল খননের ৩বছরেও ক্ষতিপুুরণ পায়নি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা তাদের ক্ষতিপূরণ পাবে, তবে কবে নাগাদ পাবে সে বিষয়ে সঠিক কোন দিনক্ষণ বলতে পারছেন না তারা। ফলে চলমান করোনা দুর্যোগে জমি ও ফসল হারিয়ে চরম মানবেতর জীবন যাপন করছেন এসব ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা।

জানা যায়, ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে দুই কিলোমিটার বেলগাছি ইনটেক খনন প্রকল্পের জন্য টেন্ডারের মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ড টেকনিপ কর্পোরেশন নামে ঢাকার একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেন। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি খরচ কমাতে পানি উন্নয়নে বোর্ডের স্থানীয় কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজসে পূর্বে যেখান দিয়ে হড়াই নদীর খাল ছিল সেখান দিয়ে না কেটে ব্যক্তি মালিকাধীন ও ফসলি জমি কেটে খাল খনন করেন।

এতে কৃষক ছোরাপ ব্যাপারীর ৩ একর ৪১ শতাংশ, আজিজ সরদারের ৭১ শতাংশ, আয়নাল প্রামানিকের ৩টি টিনের ঘরসহ প্রায় ৭শতাংশ, উত্তম কুন্ডুর ১৩৩শতাংশ, জয়নাল শেখের ২ একর ৪৫ শতাংশসহ আবুল হাসেম ও মাধুরী রানী সাহার ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। খাল খনন করার সময় এসব কৃষকেরা বাঁধা দিেেল পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন তাদেরকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার আশ^াস দিয়ে খনন কাজ সম্পন্ন করেন।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ছোরাপ আলী ব্যাপারী জানান, হড়াই নদী খনন করার সময় সরকারী জমির সাথে চর সন্তোষপুর মৌজায় তার ১৬৫ শতাংশ ফসলি জমি কেটে খাল করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তারা বাঁধা দিতে গেলে পানি উন্নয়ন বোর্ডর লোকজন তাদের ভয়ভীতি দেখায়। এ নিয়ে তিনি আদালতে মামলা করলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন তাকে হুমকি দিয়ে সেই মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য করেন।

খানগঞ্জ গ্রামের জয়নাল শেখ জানান, তার ২ একর ৪৫ শতাংশ জমিতে তিনি ইরি ধান, গম ও মশুরীর ডাল চাষ করেছিলেন। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড তার জমির উপর দিয়ে খাল খনন করায় তিনি সেই ফসল ঘরে তুলতে পারেননি। ফসল ঘরে তুলতে না পারায় তিনি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আয়নাল প্রামানিক জানান, চর সন্তোষপুর মৌজায় তিনি রেকর্ডীয় মালিকের কাছ থেকে ৬.৬৬শতাংশ জমি ক্রয় করে ৩টি টিনের ঘর তুলে সেখানে বসবাস করছিলেন। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড বেলগাছি ইনটেক খনন করার সময় তার জমির উপর দিয়ে খনন করে। ফলে তিনি বসতবাড়ীটুকু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন।

উত্তম কুন্ডু জানান, একই মৌজায় তার ১৩৩ শতাংশ ফসলি জমি ছিল। এর একটু দুরেই ছিল হড়াই নদীর খাল। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড ওই জমির উপর দিয়ে খনন না করে তার ব্যক্তিগত মালিকানা ফসলির জমির উপর দিয়ে খাল খনন করে। কিন্তু এ পর্যন্ত তিনি কোন ক্ষতিপূরণ পাননি।

ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক আজিজ সরদার জানান, চর সন্তোষপুর মৌজায় তার ৮২ শতাংশ জমি রয়েছে। হড়াই নদী খনন প্রকল্পের আওতায় বেলগাছি ইনটেক খনন করার সময় তার ৮২ শতাংশ জমির মধ্যে ৭০ শতাংশ ফসলি জমি কোন প্রকার ক্ষতিপূরণ না দিয়েই খনন করে খালের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। যার ফলে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হন। ওই জমিতে তিনি পেঁয়াজ ও পেঁয়াজের দানা চাষ করতেন। এই ৩ বছরে তিনি ওই জমি থেকে ২০ লক্ষ টাকার ফসল পেতেন। তার জমিটুকু খাল খনন করায় তিনি চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এছাড়াও পানি উন্নয়ন বোর্ড তাদেরকে জমি ও ফসলের ক্ষতিপূরণ দিতে চাইলেও ৩বছরে তারা কোন ক্ষতি পূরণ পায়নি।

তিনি আরো জানান, চলমান মহামারী করোনা ও বন্যা পরিস্থিতির কারণে তারা এমনিতেই নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছেন। যেটুকু ফসলি জমি ছিল তা হারিয়ে তারা সবাই এখন চরম মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এ ব্যাপারে তিনি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল আহাদ জানান, তিনি রাজবাড়ীতে চলতি বছরে যোগদান করেছেন। এ প্রকল্পে যেভাবেই হোক ব্যক্তি মালিকাধীন জমি ব্যবহার করা হয়েছে। প্রথমে আমরা ৩ হেক্টর জমির ক্ষতিপূরণ চেয়ে প্রকল্প পরিচালকের কাছে প্রস্তাবনা পাঠিয়ে ছিলাম। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি এ প্রকল্পে আরো কৃষকের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার পরিমান ৮ হেক্টর। এই ৮ হেক্টর জমির প্রাক্কলিত মূল্যের চেয়ে তিনগুন বেশী মূল্য নির্ধারণ করে প্রস্তাবনা তৈরী করা হয়েছে। সেটি প্রকল্প পরিচালকের দপ্তরে পাঠানো হবে। তবে কবে নাগাদ ক্ষতিগ্রস্তরা তাদের ক্ষতিপূরন পাবে সে বিষয়ে তিনি সঠিক কোন দিনক্ষণ জানাতে পারেননি।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..

Leave a Reply

Your email address will not be published.

© All rights reserved  2019 Rajbarisangbad
Theme Developed BY ThemesBazar.Com